লালমনিরহাট বার্তা
সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন-২০২২
বার্তা ডেস্কঃ | ১৮ জুন, ২০২২, ২:৩৪ PM
সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলন-২০২২
বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ২১ দফা সংবলিত জাতীয় সনদ ঘোষণা করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন। জাতীয় সনদ উত্থাপন করেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মাল্টিপারপাস মিলনায়তনে সুজনের অষ্টম জাতীয় সম্মেলনে এই সনদ উত্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হবে একটি স্বল্প মেয়াদের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন এবং আগামীতে একটা সুষ্ঠ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এই ঐকমত্যের সনদ বাস্তবায়ন করবেন। আবার আর যেন এক দিনের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হয়।
এ সময় তিনি সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জাতীয় সনদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। জাতীয় সনদের প্রস্তাব প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে সংকটের সম্মুখীন আমরা হয়েছি, তা কোনো একক দলের পক্ষে সমাধান সম্ভব না। আমাদের দরকার একটা জাতীয় সমঝোতা। সেই লক্ষ্যে আমরা ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছি। এর উদ্দেশ্য হলো, এগুলোকে প্রাথমিক আলোচনার বিষয় ধরে নিয়ে রাজনীতিবিদ ও অংশীজনেরা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটা জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবেন। জাতীয় সনদের প্রথম পদক্ষেপ হবে একটা সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্য ঐকমত্যের ২১ দফা হলো - রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, নির্বাচনকালীন সরকার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অবসান, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন।
সম্মেলনে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, দেশে যখন এক এক করে সমস্ত প্রতিবাদী সংস্থা গুটিয়ে যাচ্ছে। সংসদে বিরোধী দলের লোকেরা সরকারের সমর্থন দেয়। পৃথিবীর কোথাও এমন সিস্টেম নেই। যুগ যুগ ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে সংসদীয় গণতন্ত্রের সিস্টেম চালু হয়েছে, এখানে তার ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। সাধারণকে প্রতিবাদ করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য সুশাসন জরুরি। গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, বাংলাদেশে এক নায়কত্ব থাকবে, মানুষের অধিকার থাকবে না, এর জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। যেখানে অন্যায় হবে, তার বিরুদ্ধে আমরা কথা বলব। নাগরিক সংগঠনের কর্তব্যই এটা।
সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আগত আঞ্চলিক প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। লালমনিরহাট থেকে আগত বিশিষ্ট সমাজ সেবক গেরিলা লিডার ও সুজনের সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম কানু বলেন,-“ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আমরা উত্তর জনপদের মানুষ বিভিন্ন কারণে নানা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত । সকলের কাছে আমার জোড়ালো আবেদন আমরা যেন আর বঞ্চিত না হই। সুজনের সহসভাপতি ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন ড. আকবর আলী খান, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসসহ প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- সুজনের জাতীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে সুজনের বিভাগ, জেলা ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এই বিভাগের আরও খবর