লালমনিরহাট বার্তা
যাতায়াতের সড়ক বেহাল অবস্থা দহগ্রামের গুচ্ছগ্রামে থাকছেনা লোকজন
আজিনুর রহমান আজিমঃ | ২৫ জুন, ২০২২, ৮:৩৩ AM
যাতায়াতের সড়ক বেহাল অবস্থা দহগ্রামের গুচ্ছগ্রামে থাকছেনা লোকজন
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত গুচ্ছগ্রামে থাকছেন না বরাদ্দ পাওয়া পরিবার গুলো। চলাচলের একমাত্র সড়কের বেহাল দশায় মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হয়ে চলে যাচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে এখানকার বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটান।
জানা গেছে, সরকারের ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের তিস্তা নদী অববাহিকার বড়বাড়ি এলাকায় ২০১৮ সালে গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায়ে ক্লাইমেট ভিকটিমস্ রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় তিনধাপে ১৩০ টি বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। বাড়ি গুলোতে ভ‚মিহীন, গৃহহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারকে খাস জমিতে পূর্ণবাসনের লক্ষ্যে সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। নির্মাণের পর থেকে এ গুচ্ছগ্রামে পূর্ণবাসিত পরিবার গুলো যাতায়াতের সড়কের কারণে নিত্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গুচ্ছগ্রামটিতে সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েল, বৈদ্যুতিক সংযোগ, উন্নত চুলা এবং ঋণ সুবিধা থাকলেও প্রায় পঞ্চাশটি বসতবাড়ির পরিবার জীবন-জীবিকার চাহিদায় অন্যত্র চলে গেছে। বসবাসকারীদের মতে, প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও তিস্তা নদীর বন্যায় বসতবাড়ি গুলোর মাটি ধ্বসে যায়। এতে বেশির ভাগ বাড়ির ঘর গুলোর মেঝের অর্ধ্যাংশ ভেঙে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা রাস্তা হতে গুচ্ছগ্রাম যাওয়ার প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি বৃষ্টি, বন্যা, খড়া/শুষ্ক সব মৌসুমে চলাচলে অনুপযোগী। বর্তমানে বৃষ্টি আর বন্যায় সড়কটির অনন্ত ৮-১০ জায়গায় ভেঙে গেছে। সড়কে কালভার্টটিও ভেঙে গেছে, সেতুর সংযোগ সড়ক ধ্বসে যাওয়ায় বেশ কষ্টে চলাচল করে এখানকার বাসিন্দারা। গুচ্ছগ্রামটিতে বসবাসরত পরিবার সমূহ দরিদ্র ও দিনমজুর হওয়ায় কাজের সন্ধানে যাওয়া-আসায় প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। দীর্ঘদিনেও একমাত্র চলাচলের সড়টির সংস্কার না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এখানকার বাসিন্দারা। এখানে বসবাসরত পরিবার গুলোর সন্তানেরা পায়ে হেঁটে দূরের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। অপরদিকে তিস্তা নদী প্রতিবছর বন্যায় ভাঙতে ভাতে গুচ্ছগ্রামের একদম নিকটে চলে এসেছে। নদীর হাত থেকে গুচ্ছগ্রামটিকে রক্ষায় বাঁধ না দিলে যে কোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে এটি। নানা সমস্যার কারণে গুচ্ছগ্রামের বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে এখানকার বেশিরভাগ পরিবার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দহগ্রাম-১ গুচ্ছগ্রাম নির্মিত হয়। তিনধাপে এখানে ১৩০ টি বসতঘর নির্মাণ করে পর্যায়ক্রমে ভ‚মিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাহীন, নদী ভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবার সমূহকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। গুচ্ছগ্রামটি তিস্তা নদী তীরবর্তী ও এখানকার মাটি অধিকাংশ বালু বিশিষ্ট হওয়ায় গুচ্ছগ্রামের ঘর গুলো এবং সড়কটিতে মাটি থাকেনা। প্রতিবছর সড়ক সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে কাজ করা হয়।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ময়েজ আলী (৭০) বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে বসতবাড়ি ও ঘর দিয়েছে, আমাদের বিশাল উপকার হয়েছে। শুরু থেকে গুচ্ছগ্রামে আসা-যাওয়ার একমাত্র সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যায়না। বর্ষা, খড়া সব মৌসুমে সমস্যা-এ কারণে আমাদের কষ্টের শেষ নাই। সড়কটি পাকা করে দিলে আমাদের কষ্ট লাঘব হয়।’ অপর বাসিন্দা ফরিদা বেগম (৪৫) বলেন, চলাচলের রাস্তা নাই, তিস্তা নদীর প্রতিবছর ভাঙে এতে কাছ ঘেঁসে গুচ্ছগ্রাম। নদীর পানি বাড়লে আমাদেরকে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। বন্যায় যে কোনো সময় গুচ্ছগ্রাম নদীতে চলে যাবে।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গুচ্ছগ্রামটির বাসিন্দারা সড়টির কারণে দুর্ভোগে রয়েছে। অনেকে চলে যাচ্ছে। রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। সংশ্লষ্ট মহলের সিকট অনুরোধ যেনো সড়কটি দ্রæত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাজির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এই বিভাগের আরও খবর