লালমনিরহাট বার্তা
পাটগ্রামে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহবুব কামাল ও গবেষক সায়েদুল ইসলামকে সংবর্ধনা
বিশেষ প্রতিনিধি | ২৭ এপ্রি, ২০২৩, ২:০৭ PM
পাটগ্রামে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহবুব কামাল ও গবেষক সায়েদুল ইসলামকে সংবর্ধনা

পাটগ্রাম প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাহবুব কামাল ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক কৃষিবিদ সায়েদুল ইসলাম মিঠুকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক মাহবুব কামাল ও গবেষক সায়েদুল ইসলাম মিঠু, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক দুলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিনুর রহমান, সদস্য আবু আলম মিয়া, জিয়ায়ুর রহমানসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাহবুব কামাল বলেন, মফঃসল সাংবাদিক এই শব্দদ্বৈতের ব্যবহার ঠিক নয়। সাংবাদিক মানে সাংবাদিকই,তার আবার মফঃসল-রাজধানী কী? ধরা যাক, পাটগ্রামে আজ এমন এক ঘটনা ঘটলো, যা টক অফ দ্যা কান্ট্রি। তো এই সংবাদ দেশের সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় লিড নিউজ হবে এবং নিউজটা পাঠাবেন আপনারাই। তো রাজধানীর সাংবাদিকদের সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য কোথায়? তবে দুঃখের বিষয়,আপনারা সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারেননি। অনেকেই আপনাদের সাংবাদিক না বলে সাংঘাতিক বলে থাকে,অবশ্য এই অপবাদ আমাদেরও(রাজধানীর)সহ্য করতে হয়।এই অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আর সেজন্য দরকার সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য উপায়ে(ব্যবসা,কৃষি ইত্যাদি)উপার্জন করা। টাকা না দিলে লিখে দিবো,এই প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি থাকাটাও ঠিক নয়। পাটগ্রামে তেমন বিভক্তি থাকলে তা দূর করে অন্যদের জন্য সেটা অনুকরণীয় করে তুলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা,নিউজ করার ব্যাপারে থাকতে হবে বস্তুনিষ্ঠতা, উপেক্ষা করতে হবে প্রভাবশালীদের ভয়ভীতি। অবশ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে সৎ সাংবাদিকতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই কালো আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনকে কোনো সরকারি কর্মকর্তা অগ্রাহ্য করলে নিতে হবে আইনগত ব্যবস্থা। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই সাংবাদিকরা সমাজের অগ্রবর্তী শ্রেণী। আমরা হতে পারবো না কেনো? দুঃখের বিষয়,সাংবাদিক সমাজ ও এদেশকে যারা স্বাধীন করেছে,সেই মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের সম্মানজনক অগ্রবর্তী শ্রেণী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা ঘুচাতে হবে। আর এজন্য সবচেয়ে যা প্রয়োজন তা হলো,জ্ঞানচর্চা ও আচরণবিধিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা। আরও জরুরি চালচলনে স্মার্ট থাকা। পুলিশ,আইনজীবী ও সাংবাদিক এই তিন শ্রেণীকে পশ্চিমা সমাজ বিশেষ মূল্য দিয়ে থাকে, কারণ তারাই মানবসেবার বৃহত্তর দায়িত্বটি পালন করে থাকেন। অথচ আমাদের দেশে এই তিন শ্রেণীকে সাধারণ মানুষ যথাযথ মূল্যায়ন করেন না। কারণটা খুঁজতে হবে আর কারণ খুঁজে পেলেই সমাধানও পাওয়া যাবে।

এবছরটি নির্বাচনের আর তাই সংবাদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে অনেক।অতি সাবধানে করতে হবে নিউজ। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে promote বা demote করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে সৎ সাংবাদিকতার উপর নির্ভর করছে এদেশের ভবিষ্যতের অনেক কিছু। তিনি তার এই বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

একই দিন তার অন্য একটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এই পোস্টটি গত পোস্টের annexure বা সংযুক্তি বলা যেতে পারে। পাটগ্রামের সাংবাদিকদের দুটি ক্লাব রয়েছে। একটির নাম প্রেসক্লাব পাটগ্রাম, লালমনিরহাট। আর অন্যটি পাটগ্রাম প্রেস ক্লাব। প্রথমটি অর্থাৎ প্রেসক্লাব পাটগ্রাম লালমনিরহাট আকারে বড় সংগঠন। প্রথম আলোসহ বেশ কটি জনপ্রিয় দৈনিক ও টেলিভিশনের প্রতিনিধিরা এর সদস্য। এরাই আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে। সংবর্ধনা শেষে বাসায় ফিরে গত পোস্টটি ছেড়ে দেওয়ার পরপর দ্বিতীয় ক্লাব অর্থাৎ পাটগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য কামরান ফোন করে বললো, স্যার আমরাও আপনাকে সংবর্ধনা দিতে চাই। কালকে সময় দিতে পারবেন? আমি বললাম, আমি তো আজ রাতেই চলে যাচ্ছি। এরপর সে বললো, ঠিক আছে, পরের ঈদে আমাদের সংবর্ধনায় আপনাকে আসতেই হবে। বললাম, ঠিক আছে।

রাত আটটার ফ্লাইট ধরবো বলে গোছগাছ করছি, এমন সময় যারা আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছিলো, তাদের একজন বাসায় এসে হাজির। আমাকে সি অফ করতে এসেছেন। তিনি বললেন, স্যার আপনার বক্তৃতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি আর আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার যে কথা বলেছেন, তা খুব এনজয় করেছি। আপনার কাছ থেকে আরও কিছু শুনতে চাই। আমি বললাম, সময় তো বেশি নেই, তবু আপনি যখন বলছেন , তখন কয়েকটি কথা বলি।

এক বিখ্যাত সাংবাদিক সাংবাদিকতাকে বলেছেন Parliament always in session. এটা এমন এক পার্লামেন্ট যার কোনো মূলতুবি বা বিরতি নেই। বছরের ৩৬৫ দিনের ২৪ ঘন্টাই এই পার্লামেন্টের অধিবেশন চলে থাকে অর্থাৎ সাংবাদিকতা হলো বিরতিহীন এক বিশাল দায়িত্ব। আপনারা তো সাংবাদিকতাকে প্রশাসনের দুর্নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছেন। সাংবাদিকতা এত ছোট বিষয় নয়।

দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, একজন সাংবাদিকের বিশ্বাসযোগ্যতা হচ্ছে নারীর ভার্জিনিটি বা কৌমার্যের মতো। এটা একবারই নষ্ট হয়। অর্থাৎ আপনি যদি একবার আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে ফেলেন, তাহলে আপনি আর আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আরেকটি কথা বলে শেষ করি। সত্য বিকৃত করে যে সাংবাদিকতা করা হয় তা যেমন অপসাংবাদিকতা, তেমনি জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় এড়িয়ে যাওয়াও অপসংবাদিকতা।

তিনি চলে গেলে আমি স্ত্রীসহ মিঠুর গাড়িতে সৈয়দপুর চলে আসি। সেখানে অপেক্ষা করছে যুগান্তরের সৈয়দপুর প্রতিনিধি রুকসানা এবং আমার এককালীন হলমেট সৈয়দপুর নিবাসী জাসদ নেতা আজিজ ভাই। একজনের সঙ্গে দেখা হলো, আরেকজনের সঙ্গে সময়ের অভাবে দেখা হলো না। রাত আটটায় চড়ে ঠিক পৌনে নয়টায় নেমে গেলাম ঢাকা এয়ারপোর্টে। আর কবে পাটগ্রাম যাবো অথবা আদৌ যাবো কিনা জানি না ।

এই বিভাগের আরও খবর