লালমনিরহাট বার্তা
‘দহগ্রাম ইউনিয়নকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলতে চায় ভারতের রাজ্য সরকার’
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ২৪ জানু, ২০২২, ১২:৩১ PM
‘দহগ্রাম ইউনিয়নকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলতে চায় ভারতের রাজ্য সরকার’
ভারতের ভিতরে আলোচীত বাংলাদেশি ভ‚-খন্ড দহগ্রাম ইউনিয়নের চারদিক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলতে চায় ভারতের রাজ্য সরকার। গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশিদের একমাত্র চলাচলের সড়ক তিনবিঘা করিডর পরিদর্শন শেষে এ তথ্য জানায় ওই (ভারত) দেশের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জন বারলা। এ সংক্রান্ত একটি খবর বেরিয়েছে ভারতের উত্তরবঙ্গের দৈনিক পত্রিকা ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ পত্রিকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে ভারতের মেখলিগঞ্জ পৌরসভার ভোটের আগে বিজেপি নেতা-কর্মীদের সাথে সভা করতে আসেন তিনি। এদিন তিনি (কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা) বিকেলে মেখলিগঞ্জ শহরে সভা করেন। সভার আগে ভারতীয় জমি ব্যবহার করে বাংলাদেশিদের একমাত্র চলাচলের সড়ক তিনবিঘা করিডর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে করিডর সড়ক হয়ে দহগ্রামে প্রবেশকালীন বাম দিকে আম গাছের নিচে নির্মিত কক্ষে বিএসএফের কর্মকর্তাদের সাথে সভায় বসেন তিনি। প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী ওই সভায় সীমান্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন মন্ত্রী। এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী/বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কোচবিহার রাজ্যের রাণীনগর ৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডারসহ (অধিনায়ক) উর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণ ও বিজেপির জলপাইগুড়ি এবং মেখলিগঞ্জ থানার সভাপতি ও অন্যরা সাথে ছিলেন। সভা শেষে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা বলেন, ‘কুচলিবাড়ি সীমান্তের দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তের চারদিকে এখনও কাঁটাতারের বেড়া না হওয়ায় সীমান্তে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। গরু পাচার, অনুপ্রবেশ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকার কাঁটাতারের বেড়া দিতে প্রস্তুত। রাজ্য সরকার জমি দিলে দ্রæত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা দেওয়া হবে।’
বিজিবি’র একটি সূত্র জানায়, ভারতের ভিতরে বাংলাদেশি ভ‚-খন্ড দহগ্রাম ইউনিয়ন হওয়ায় দিন-রাত সবসময় বিএসএফ কড়া প্রহরা অব্যাহত রাখে। তিনবিঘা করিডর সড়ক ব্যবহার করে কতজন যাতায়াত করে, যানবাহনসহ সবকিছুরই প্রতিদিনের তালিকা সংরক্ষণ করে তাঁরা। ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার এ বাংলাদেশি ভ‚-খন্ড দহগ্রাম ইউনিয়নের চারদিকে ভারতের ১১ টি বিএসএফ ক্যাম্প রয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র তিনবিঘা করিডর ঘিরে দুই দিকে ৪ টি ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা পর্যায়ক্রমে সবসময় কড়া প্রহরা দেয়। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর দু’টি ক্যাম্পের সদস্যরাও সবসময় কড়া দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মেনে বিজিবি দায়িত্ব পালন করে থাকে। উভয় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ ব্যতিত দহগ্রাম ইউনিয়নের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া বিএসএফকে দিতে দেওয়া হবেনা।
দহগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউল আলম বাবলু বলেন, ‘ভারতের অসংখ্য বিএসএফ সদস্যরা সবসময় আমাদেরকে ঘিরে রেখেছে। আমরা দহগ্রামের অধিবাসিরা গৃহপালিত গরু ভারতের সড়ক ব্যবহার করে সপ্তাহে ৬০ টির বেশি বাংলাদেশের মূল ভ‚-খন্ডে নিয়ে যেতে পারি না। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিলে তো আমাদেরকে খাঁচার মধ্যে বন্ধি করে রাখার মত হবে।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম আঙ্গরপোতাবাসীদের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘবে ২০১১ সালে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা ও চুক্তি করেন। সে অনুযায়ী ওই বছরের ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম এসে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনবিঘা করিডর গেট ২৪ ঘন্টা খুলে দেন। ভারত আমাদেরকে এমনিতেই চারদিকে ঘিরে রেখেছে। চারদিকে ঘিরে ফেললে আমাদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে। ভারতের এ ধরণের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি। ১৯৪৭ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ণ চাই। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এ ব্যাপারে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রংপুর ৫১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এএফএম আজমল হোসেন খান বলেন, ‘দহগ্রাম ইউনিয়নের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের যে কথা তিনি (কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জন বারলা) বলেছেন বিষয়টি আমি জেনেছি। বিস্তারিত না জেনে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা।’
এই বিভাগের আরও খবর