পাটগ্রামে অনুমোদনহনী বেসরকারী হাসপাতালে আবারও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ২৩ জুন, ২০২২, ১১:১৭ AM
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবার অভাবে আবারও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন অনুমোদনহীন এ হসপিটালটি ৩ দিন আগে সরেজমিনে দেখে বন্ধের নির্দেশ দিলেও হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এটি পরিচালনা করতে থাকার দুই দিনের মাথায় নবজাতকের মৃত্যু হল। এরআগেও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এখানে। জানা গেছে, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের আজিজপুর এলাকার মিলন হোসেনের স্ত্রী রিংকী আক্তারের গত রোববার (১৯ জুন) প্রসব ব্যথা শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে চেষ্টার পর সোমবার (২০ জুন) পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসে। এখানকার (স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের) চিকিৎসক স্বাভাবিকভাবে প্রসব সম্ভব হবেনা, জরুরীভাবে অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। রিংকী আক্তারের বাবা, শ্বশুর ও সঙ্গে আসা অন্যান্যরা গর্ভবতী নারী ও আগত সন্তানের কথা বিবেচনা করে অস্ত্রোপচার করতে সম্মত হন। স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক মঙলবার রাতে অস্ত্রোপচার করে। এতে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রিংকী আক্তার। নবজাতকটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে বুধবার দুপুরের দিকে নবজাতকের অবস্থার অবনতি বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বলেন। ১০ মিনেটের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কমপ্লেক্সের ইউএইচঅ্যান্ডএফপিও ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নবজাতকটির আধা ঘন্টা আগে মৃত্যু হয়েছে।’ নবজাতকটিকে ফিরে নিয়ে এসে স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে বেশ কিছু সময় বিলাপ করে কাঁদতে থাকেন নবজাতকের নানী অঞ্জনা বেগম। এরআগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আরও এক নবজাতকের মৃত্যু ঘটে ্ওই হসপিটালটিতে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির হাসপাতাল কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন ছিলনা। তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু একটা ঘটেছে (নবজাতকের মৃত্যু) এজন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে সিলগালা করে দেওয়ার জন্য বলেছি।’ রিংকী আক্তারের বাবা গোলজার হোসেন বলেন, ‘গর্ভবতী মেয়েটির পরিস্থিতি বোঝার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করতে ও পরামর্শ নিতে স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসি। তাঁরা (হসপিটাল কর্তৃপক্ষ) আলট্রাসনোগ্রাম করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়। ২০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে অস্ত্রোপচার করা হয়। আমি বাড়ি যাই টাকা সংগ্রহ করতে। দুপুরে নাকি শিশুটি অসুস্থ হয়, তাদের লোকজনসহ উপজেলার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানা যায় শিশুটি আগেই মারা গেছে। আমরা গরীব মানুষ কি করি ভেবে পাচ্ছিনা।’ রিংকী আক্তারের স্বামী মিলন হোসেন বলেন, ‘আমি জানিনা, তাঁরা কি ধরণের চিকিৎসা দিলো যে আমার সন্তানটি মারা গেল।’ পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাচ্চার কোনো সমস্যা ছিলনা। জীবন-মৃত্যুর বিষয়টা আলাদা। অস্ত্রোপচার বা এখানকার কোনো সমস্যার কারণে মরেছে তা তো না। উনাদেরকে বলা হয়েছিল যে আপনাদের বাচ্চার সমস্যা। অনেক কাজই তো করা হচ্ছে, সমস্যা তো হয়নি।’ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচঅ্যান্ডএফপিও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতাল কার্যক্রম চালাতে পারবে না, এটা সিভিল সার্জন বলেছে, আমিও আগেই বলেছি। ওই হসপিটালের মালিকপক্ষকে ডেকে সমগ্র কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি সদুত্তর না থাকে সেক্ষেত্রে এটাকে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।’