লালমনিরহাট বার্তা
মওলানা ভাসানীর সত্তরের নির্বাচন বর্জন ও স্বাধীনতার ডাক - আলরুহী
বার্তা ডেস্ক | ২ মে, ২০২৩, ৬:৩১ AM
মওলানা ভাসানীর সত্তরের নির্বাচন বর্জন ও স্বাধীনতার ডাক - আলরুহী

মওলানা ভাসানী যেহেতু এক বিচক্ষণ দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাই তিনি বুঝতে পেয়েছিলেন যে বাঙালিরা ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হলেও প্রাদেশিক শাসন ক্ষমতা অর্পণ করবে না, পূর্ব বাংলার গণমানুষের মুক্তি নেই। তাই তিনি সোজা সাপটা বলে ছিলেন ভোটের বাক্সে লাথি মার, পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর পূর্ব বাংলা স্বাধীর কর। পিন্ডি না ঢাকা ঢাকা- প্রভৃতি শ্লোগানে পল্টন ময়দান সেদিন প্রকম্পিত হয়েছিল। মওলানা ভাসানীর সেদিনের সেই ভবিষ্যৎ বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করে। ১৯৭০ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা ছাড়ছিলেন না। বাঁধা হয়ে দাঁড়াল পিপলস পার্টি নেতা জুলফির্কা আলী ভূট্টো। ক্ষমতা বুঝে দিতে তালবাহানা করে ইয়াহিয়া খান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবের সাথে বৈঠকে বসবেন। অবস্থা খারাপ দেখে ৯ জানুয়ারি ১৯৭০ টাঙ্গাইল সন্তোষে এক সম্মেলনে মওলানা ভাসানী বলেন,“প্রিয় দেশবাসী, আজ সাত কোটি পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে এই জরুরী আহŸান জানাইতে বাধ্য হচ্ছি যে, আপনারা দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ একত্রে একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচি গ্রহণ করুন, যার লক্ষ্য হবে ২৩ বছরের অমানবিক এবং শোষণকারী শাসকগোষ্ঠীর করাল গ্রাস থেকে পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম করা”। সেই লক্ষ্যে তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ জানুয়ারি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে, “স্বাধীনতার জন্য যদি প্রয়োজন হয় শেষ রক্তবিন্দু দেব।” ১৯৭১ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভায় বলেন,“স্বাধীনতার জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

মওলানা ভাসানী ৯ মার্চ ১৯৭১ পল্টন জনসভায় বলেন,“এবারের স্বাধীনতার যুদ্ধে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটবে মনে রাখবা রক্তের বদৌলতে বাংলার স্বাধীনতা আসবেই।” ১৯ মার্চ ১৯৭১ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলার নিরস্ত্র জনসাধারণকে গণহত্যা নির্দেশ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে যায়। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ সাল কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনি ঘুমন্ত বাঙালির উপর পৈশাচিক গণহত্যা চালায়। নাম দেয় “অপারেশন সার্চ লাইট”। বঙ্গবন্ধুকে রাত ১২.০০ ঘটিকায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু পক্ষে তৎকালিন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। শুরু হয়ে যায় বাঙালির স্বাধীনতার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনি শুরু করে একের পর এক তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞা। ৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনি টাঙ্গাইলে আসতে থাকে। তারা প্রথমে পাকুল্লার সাটিয়াচরায় মুক্তিবাহিনির প্রতিরোধের মুখে বাধা প্রাপ্ত হয় সম্মুখ যুদ্ধ প্রায় কয়েজন হানাদার বাহিনির সদস্য মৃত্যুবরণ করে। পরে ভারী অস্ত্রের মুখে মুক্তিবাহিনি পিছু হটতে বাধ্য হন। বাঙালির নেতা মওলানা ভাসানী তখন বিন্যাফৈরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন তিনি খবর পেলেন তাঁর সন্তোষের বাড়িটি হানাদার বাহিনি পুড়িয়ে দিয়েছে। মওলানা ভাসানী একটুও কষ্ট পাননি। কারণ স্বাধীনতার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার, যে বলিদান তাতো তারও করতে হবে। টাঙ্গাইল থেকে তিনি আসাম চলে গেলেন। (সূত্রঃ অনন্য মওলানা ভাসানী জীবন ও সংগ্রাম)

এই বিভাগের আরও খবর