লালমনিরহাট বার্তা
রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জাতীয় সনদ
ড. বদিউল আলম মজুমদার | ১ আগ, ২০২২, ৬:৫৮ AM
রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জাতীয় সনদ
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় অন্তর্ভুক্ত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে আমাদের মুক্তযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং আমাদের অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের পূর্বসূরিদের এসব অঙ্গীকার থেকে আজ আমরা যোজন যোজন দূরে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালে একটি ঐক্যবদ্ধ জনগোষ্ঠী গঠিত হলেও, আজ আমরা চরমভাবে বিভক্ত ও নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতিতে নিয়োজিত এক জাতিতে পরিণত হয়েছি। অপরাজনীতি, নগ্ন মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারহীনতা এবং ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠান এখন দৃশ্যমান সর্বত্র। সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পরিবর্তে আমরা ক্রোনিজম ও সীমাহীন দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে এক ভয়াবহ বৈষম্যমূলক সমাজ সৃষ্টি করে ফেলেছি। আইনের শাসনের পরিবর্তে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি আমাদের ওপর চেপে বসেছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আজ চরম দুরবস্থায়। আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত এবং আমাদের অন্যান্য রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার চরমভাবে সংকুচিত। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে সাম্প্রদায়িকতার বীজ আমাদের ওপর ভয়াবহভাবে জেঁকে বসেছে। বস্তুত আমরা আজ যেন নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত, স্বার্থপর ও বিশৃঙ্খল পথ হারানো এক জাতিতে পরিণত হয়েছি।

অনেকেরই আজ আশঙ্কা যে, এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা এক সংকটময় ভবিষতের দিকে ধাবিত হতে পারি। পরিণতিতে সারাদেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আমরা সহিংস উগ্রবাদের পথে হাঁটতে পারি। এমনকি আমরা গভীর খাদেও পড়ে যেতে পারি। বিপন্ন করে ফেলতে পারি নিজেদের এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যতকে। কিন্তু, উত্তরণ কোন পথে?

আমরা মনে করি যে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আমরা আজ যেসব ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন, সেগুলো কোনো দলের পক্ষে এককভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলোর কার্যকর ও টেকসই সমাধানের জন্য প্রয়োজন সকল অংশীজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আর সকল অংশীজনের এ সম্মিলিত প্রচেষ্টার জন্য প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐকমত্য। তাই বহুদিনের পুঞ্জীভূত জঞ্জাল দূরীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজন অনেকগুলো ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সংস্কার-উদ্যোগ গ্রহণ, যার লক্ষ্য হবে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে জড়িত আমাদের তরুণদের ভাষায়, ‘রাষ্ট্রের মেরামত’।

আর এ সংস্কার ধারণাগুলোর ভিত্তিতে প্রণীত এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে পারে ১৯৯১ সালের ‘তিন জোটের রূপরেখা’র আদলে একটি ‘জাতীয় সনদ’। জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্য ঐকমত্যের ক্ষেত্রগুলো হতে পারে :

১. রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিহিংসাপরায়ণতার অবসান ঘটিয়ে রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও শিষ্টাচারবোধ ফিরিয়ে আনা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির চর্চা করা। রাজপথে হানাহানির পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সকল জাতীয় সমস্যার সমাধান করা। ব্যক্তি ও কোটারি স্বার্থের পরিবর্তে জনস্বার্থকে রাজনীতির লক্ষ্যে পরিণত করা।

২. নির্বাচনী সংস্কার : সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আইনকানুন এবং বিধিবিধানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং এগুলোর কঠোর প্রয়োগ করা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে সৎ, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়ে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা।

৩. নির্বাচনকালীন সরকার : সরকার তথা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ আচরণ ছাড়া সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি (অথবা তাদের ছাড়া) ও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে স্বল্পকালীন সময়ের জন্য একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা।

৪. কার্যকর জাতীয় সংসদ : জাতীয় সংসদকে একটি স্বাধীন ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যাতে নির্বাহী বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘চেকস ব্যালেন্সেস’ পদ্ধতি কার্যকর হয়। স্থানীয় উন্নয়নে জড়িত হওয়ার পরিবর্তে- যা আনোয়ার হেসেন মঞ্জু বনাম বাংলাদেশ [১৬ বিএলটি (এইসসিডি) ২০০৮] মামলার রায় অনুযায়ী সংবিধানের লঙ্ঘন- সংসদ সদস্যগণ আইন প্রণয়ন ও রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন। সংসদ সদস্যদের জন্য একটি আচরণবিধি প্রণয়ন এবং সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘সংসদ ও সংসদ সদস্যদের বিশেষ-অধিকার ও দায়মুক্তি আইন’ করা।

৫. স্বাধীন বিচার বিভাগ : প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণের মাধ্যমে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সঠিক ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা।

৬. সাংবিধানিক সংস্কার : সাংবিধানিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, যাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সংবিধান সংশোধন করা। সংবিধান সংশোধনের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো হতে পারে : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, সংসদের এক-তৃতীয়াংশ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রচলন, সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্তা প্রবর্তন, সংসদের উচ্চকক্ষ সৃষ্টির বিধান, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার, গণভোটের বিধানের পুনঃপ্রবর্তন ইত্যাদি।

৭. গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল : গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর বিধান অনুযায়ী দলের অঙ্গ, সহযোগী সংগঠন ও বিদেশি শাখা বিলুপ্ত করা, যাতে ফায়দা প্রদানের ও স্বার্থ হাসিলের রাজনীতির অবসান হয়। সকল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহারের ঘোষণা প্রদান করা।

৮. স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান : স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান- দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আইনি কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা এবং এসব প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করা।

৯. দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান : একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে (যুদ্ধাপরাধীদের মতো) দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টন্তমূলক শাস্তি প্রদান করা এবং তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত এবং পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনা। সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা।

১০. প্রশাসনিক সংস্কার : যথাযথ প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী জনপ্রশাসন আইন প্রণয়ন এবং মান্ধাতার আমলের পুলিশ আইনের সংস্কার করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা। ঔপনিবেশিক শাসনকালে সৃষ্ট আমাদের ওপর জেঁকে বসা ‘প্রভুত্বের কাঠামো’র অবসান করা। প্রশাসন, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবসান করা এবং সরকারি কর্ম কমিশনকে একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

১১. বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার : আইনকানুন ও বিধিবিধানের যথাযথ পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো স্বায়ত্তশাসিত, নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও কার্যকর হতে পারে। স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৫০ শতাংশ বরাদ্দকৃত অর্থ স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে ব্যয় এবং একই সঙ্গে এ সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলোর (এসডিজি) স্থানীয়করণ করা।

১২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ আইনি সংস্কার, বিশেষত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮-এর সংস্কার করা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসন ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রচার কমিশন গঠন করা।

১৩. শক্তিশালী নাগরিক সমাজ : একটি কার্যকর ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ গঠনের পথের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা, যাতে রাষ্ট্রবহির্ভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি সব সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারিত্ব করার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কার্যকর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে পারে। অযাচিত নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে নাগরিক সমাজের কাজের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

১৪. মানবাধিকার সংরক্ষণ : মানবাধিকার সংরক্ষণ ও নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলবৎ করার লক্ষ্যে নিবর্তনমূলক আইনগুলোর সংস্কার করা এবং নিবর্তনমূলক নতুন আইন প্রণয়ন থেকে বিরত থাকা। গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অবসানের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতির অবসান করা।

১৫. একটি নতুন সামাজিক চুক্তি : রাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান আয় ও সুযোগের বৈষম্য নিরসনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি প্রণয়ন করা, যাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নায্য হিস্যা নিশ্চিত হয়, তারা মানসম্মত সেবা সুলভ মূল্যে ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে পান এবং সত্যিকারার্থেই রাষ্ট্রের মালিকে পরিণত হন। প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল বৈষম্যের অবসান করা।

১৬. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা : জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্পগুলো বাতিল করা।

১৭. আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা : আর্থিক খাতে লুটপাট প্রতিরোধসহ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনী আইনি সংস্কার করা। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ও সকল ধরনের লুণ্ঠনকারীকে বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।

১৮. সাম্প্রদায়িক মানসিকতার অবসান : সমাজের সকল শুভ শক্তিকে সংগঠিত করে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা নিরসনে একটি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টামূলক শাস্তি প্রদান করা।

১৯. তরুণদের জন্য বিনিয়োগ : ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাজনিত বিশেষ সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে তরুণদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা । গ্রামীণ শিক্ষার মনোন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২০. নারীর ক্ষমতায়ন : নারী ও কন্যাশিশুদের প্রতি সকল নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সকল ক্ষেত্রে নারীদের জন্য সমসুযোগের ব্যবস্থা করা।

২১. পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন : পাহাড়ি আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার পূরণে লক্ষ্যে পার্বত্য শান্তি চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন করা, একই সঙ্গে সমতলের আদিবাসীসহ দলিত সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অগ্রগতির পথ সুগম করা।

আমরা মনে করি যে, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধানে পৌঁছার লক্ষ্যে উপরিউক্ত সংস্কার ধারণাগুলোকে আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে সকল স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মধ্যে একটি সংলাপের আয়োজন এবং তা থেকে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি। এমন ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তৈরি হতে পারে একটি জাতীয় সনদ, যাতে সকল স্বার্থসংশ্লিষ্টরা স্বাক্ষর করবেন এবং জরুরি ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে স্বল্প মেয়াদের একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, যার দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন, তাদেরই দায়িত্ব হবে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সৃষ্ট জাতীয় সনদের পরিপূর্ণ ও যথাযথ বাস্তবায়ন। তাহলেই আমাদের জটিল ও ভয়াবহ সমস্যাগুলোর একটি কার্যকর সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। তাই জাতিকে জঞ্জালমুক্ত করতে আমাদের রাজনীতিবিদদেরই এখন সাহসিকতা, প্রজ্ঞা ও নিঃস্বার্থতা প্রদর্শন করে এগিয়ে আসতে হবে।

পরিশেষে আমি জাতীয় দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকার আরও সফলতা কামনা করছি। প্রতিষ্ঠাবাষিকীতে আমার শুভেচ্ছা। আগামীতে গণমাধ্যম আরও এগিয়ে গেলে দেশ আরও এগিয়ে জাবে।

লেখক- সম্পাদক, সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক (সূত্রঃ আলোকিত বাংলাদেশ)
এই বিভাগের আরও খবর