লালমনিরহাট বার্তা
ভাসানী-মুজিব সম্পর্ক -আজাদ ভাসানী
বার্তা ডেস্কঃ | ২৭ আগ, ২০২২, ৮:০৫ AM
ভাসানী-মুজিব সম্পর্ক -আজাদ ভাসানী

ভাসানী-মুজিব সম্পর্ক নিয়ে সমাজে অনেক কথন প্রচলিত আছে। এর কিছু সত্য; কিছু আংশিক সত্য; কিছু সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত; আর বেশির ভাগই রাজনৈতিক কুটকৌশল সম্বলিত। তাই এ বিষয়ে সঠিক ইতিহাসের জন্য বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা এই দুই মহান নেতার জীবনের ইতিহাসের পরতে পরতে বাঙালি জাতির সমস্ত অর্জন জড়িয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে এম. আর. আখতার মুকুলের ‘ভাসানী মুজিবের রাজনীতি’, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর 'মওলানা ভাসানীকে যেমন দেখেছি', সৈয়দ আবুল মকসুদের ‘মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’ এবং শাহ আহমদ রেজার ভাসানী-মুজিব সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশিত 'নিবন্ধসমূহ' (জানামতে এ বিষয়ে তিনি বই লিখছেন) এর গুরুত্ব অপরিসীম। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের পূর্বাপর ভাসানী-মুজিব সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি গড়ে ওঠে। ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনকে ঘিরে বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন ও প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শিক ভিত্তির প্রশ্নে নিরাপোস থাকায় মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করলেও তাতে মুজিবের সাথে সম্পর্কে কোন প্রভাব পরেনি। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতি তিনি বেশ আস্থাশীল ছিলেন। তাই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দান করেন। শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করে আনতে ঘোষণা করেন, “প্রয়োজন হলে ফরাসী বিপ্লবের মতো জেলখানা ভেঙ্গে মুজিবকে নিয়ে আসবো”।

১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেও তিনি মুজিবকে অকুন্ঠ সমর্থন দান করেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ৯ মার্চ পল্টনের জনসভায় তিনি বাংলার আপমর জনসাধারণকে মুজিবের ওপর আস্থা রেখে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান। মুক্তিযুদ্ধকালীণ মুজিবনগর সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এসব দিক বিবেচনা করলে সহজেই প্রতিয়মান হয় যে, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে একদিকে মওলানা ভাসানী গণআন্দোলন সৃষ্টি করে পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকগোষ্ঠীকে চাপে রেখেছেন; অপরদিকে বঙ্গবন্ধু তাতে রাজনৈতিক ফয়সালার পথে হেঁটেছেন। মুলতঃ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই দুই মহান নেতার দুইমূখী ভুমিকাই স্বাধীনতা লাভে ক্রিড়নক হিসেবে কাজ করেছে। বাঙালির স্বার্থরক্ষা এবং অধিকার আদায়ের কঠিন সংগ্রামে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ উত্তরকালেও মওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন।

১৯৫৭ সালে তিনি পৃথক দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন সত্ত্বেও জীবনের শেষ অবধি তাঁর প্রিয় মজিবরের প্রতি পক্ষপাতিত্ব ও নির্মোহ সমর্থনের নজির শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষক এম. আর. আখতার মুকুলের ভাষায়, “তাহলে কি ভাসানী আর মুজিব এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির স্বার্থে আজীবন একটি অলিখিত সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনীতি করে গেছেন?” উত্তর অবশ্যই খুঁজে নেবে ভবিষ্যত প্রজন্ম। তবে তার আগে দলীয় দৃষ্টিকোণের উর্ধ্বে উঠে আমাদেরকে নির্মোহভাবে সঠিক ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণ করতে হবে। কেননা আমাদের জাতীয় ইতিহাস আর অর্জনগুলোকে কলঙ্কিত করতে একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবি আর রাজনীতি ব্যবসায়ীরা জাতীয় ঐক্যের সরোবরে বিষ ঢালতে শুরু করেছে। চাটার দলেরা হীন স্বার্থে ইতিহাস বিকৃতির নির্লজ্জ খেলায় মেতেছে। এতে করে কারা লাভবান হচ্ছে তা প্রকৃত দেশপ্রেমিক নাগরিক আর প্রকৃত রাজনীতিবিদদের অনুধাবন করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাই এদের সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ইতিহাসের সোপান ধরে ধরে প্রত্যেকের অবদানকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় ঐক্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাস্তবায়িত হতে পারে শোষণহীন সোনার বাংলাদেশ।

এই বিভাগের আরও খবর