লালমনিরহাট বার্তা
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভ্রমণ কর ও বন্দর মাশুল পরিশোধে হয়রানি
পাটগ্রাম প্রতিনিধিঃ | ১২ মে, ২০২২, ৮:২৩ AM
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভ্রমণ কর ও বন্দর মাশুল পরিশোধে হয়রানি
দেশের অন্যতম স্থলবন্দর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ব্যাংকের বুথ না থাকায় এ বন্দরের সড়ক পথ ও পুলিশ অভিবাসন চৌকি (পুলিশ ইমিগ্রেশন) হয়ে বিভিন্ন দেশে যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারী যাত্রী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের আদায়কৃত মাশুল পরিশোধে হয়রানিতে ভুগছেন।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটির চালু হয়। পরবর্তীতে সরকার ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটিকে শুল্ক বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেয় এর ৮ বছর পর ২০১০ সালের ৩০ মার্চ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে পরিপত্র জারি করে সরকার। এ স্থলবন্দরটির অপরপার্শ্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানায় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস্ শুল্ক স্টেশন/ স্থল বন্দর ও চ্যাংরাবান্ধা পুলিশ অভিবাসন চৌকির (পুলিশ ইমিগ্রেশন) অবস্থান। বুড়িমারী স্থলবন্দর সড়ক পথ ও পুলিশ অভিবাসন চৌকি (পুলিশ ইমিগ্রেশন) ব্যবহার করে ভারত, ভুটান ও নেপালে প্রতিদিন শত শত যাত্রী চলাচল করে থাকে। দেশের গুরত্বপূর্ণ এ স্থলবন্দরের অবকাঠামো ব্যবহারে আদায়কৃত ও অন্যান্য খাত থেকে আদায়কৃত সরকারি রাজস্ব বা মাশুল প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকা। সরকারি এ গুরত্বপূর্ণ স্থাপনায় (স্থলবন্দরে) কোনো ব্যাংকিং সুবিধা নাই। এতে স্থল পথে বিদেশ ভ্রমণে যাত্রী সাধারণদেরকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ভ্রমণ কর স্থলবন্দর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হয়। এতে প্রতি যাত্রীকে অতিরিক্ত ৩০-৪০ টাকা ব্যয় করতে হয়। সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি একমাত্র মহাসড়ক ব্যবহার করে যাতায়াতে যানজটের কবলে পরে নানা ধরণের হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অপরদিকে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের বন্দরে গাড়ি প্রবেশ মাশুল, ওজন/পরিমাপ মাশুল, শ্রমিক ও পণ্য খালাস ও বোঝাই মাশুল, গাড়ি ও পণ্য অবস্থানের মাশুল, মাঠ ও শেড ব্যবহারের মাশুল, যাত্রী কর্তৃক অবকাঠামো ব্যবহারে মাশুল প্রভৃতি বন্দর পরিচালনায় সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন অংকের মাশুল ও মূসক বা ভ্যাট পরিশোধের জন্য ভ্রমণকারী, ব্যবসায়ী, গাড়ি চালকদেরকে নির্দ্দিষ্ট রশিদ প্রদান করেন। বন্দর ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন রশিদে/চালানে উল্লেখিত নগদ অর্থ স্থলবন্দর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বুড়িমারী বাজারে থাকা জনতা ব্যাংক শাখা কার্যালয়ে গিয়ে জমা প্রদান করেন। টাকা জমা দেওয়ার রশিদের কপি বন্দর কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হয়। এতে বন্দর ব্যবহাকারী জনসাধারণ, ব্যবসায়ী সবাই নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই (এপ্রিল ২০১০ হতে) তাঁদের আদায়কৃত অর্থ চালানের মাধ্যমে নিকটস্থ জনতা ব্যাংক বুড়িমারী শাখায় জমা দিয়ে আসছে। স্থলবন্দরের দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনে ৩০ টি কক্ষ রয়েছে। ভবনে শুরু থেকেই ব্যাংকের বুথ স্থাপনের জন্য কক্ষ বরাদ্দ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। দেশ-বিদেশের যাত্রী, ব্যবসায়ী, কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ, বন্দর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের সুবিধার্থে দিনের ১০ টা হতে রাত ৯ টা পর্যন্ত ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিকবার চিঠি চালাচালি করে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এতে কোনো কাজ হয়নি। ২০১৯ সালের অক্টোবরে জনতা ব্যাংক লিমিটেড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট বুড়িমারী স্থলবন্দরে ব্যাংকের একটি বুথ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে পত্র দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়মানুযায়ী কক্ষ বরাদ্দ দিয়ে তথ্য সরবরাহ করলেও অদ্যাবধি বুথ খোলা হয়নি।
২০২০ সালের মার্চে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ঢাকা ও একই বছরের সেপ্টেম্বরে এবং ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারিতে বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জনদুর্ভোগ রোধে ও সরকারি রাজস্ব জমা দেওয়ার স্বার্থে আবারও জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। কিন্তু বুথ খোলার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা জেলার বাসিন্দা বিমল চন্দ্র বর্মণ ও বপন কুমার সরকার বলেন, ‘ভ্রমণ কর পরিশোধ করতে ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ব্যাংকের শাখায় জমা দিতে হয়েছে। এটা স্থলবন্দরের ভবনে হলে খুব ভালো হত। সময় কম লাগতো।’
বাংলাদেশি যাত্রী ঢাকার ২২৬ নং বংশাল রোডের মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘ভ্রমণ কর জমা দিতে স্থলবন্দর ভবনে ব্যাংকের বুথ থাকলে ভালো হত। দূরে হওয়ায় সমস্যা।’
জনতা ব্যাংকের বুড়িমারী শাখার ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘স্থলবন্দরের কক্ষে যদি বুথ স্থাপন করে পরিচালনা হয় তাতে কিছু ঝামেলা রয়েছে। প্রতিদিন রাত ১০ টার পর প্রায় ৩০ লাখেরও ঊর্দ্ধে টাকা নিয়ে স্থলবন্দর থেকে দূরে আবার ব্যাংকের শাখায় আসা ঝুঁকিপূর্ণ। এসব কারণে বুথ স্থাপন বিলম্বিত হচ্ছে। নগদ টাকা নিয়ে আসা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমাদের শাখায় টাকা জমা নেওয়া হয়।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বলেন, ‘স্থলবন্দর ভবনে ব্যাংকের বুথ না থাকায় এ বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন যাত্রীসহ অনেকে নানা ধরনের সমস্যা ও দুর্ভোগে পড়ছেন। বুথ স্থাপনের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবারও জানাবো।’
এই বিভাগের আরও খবর