লালমনিরহাট বার্তা
রংপুরের নিভৃত পল্লীর ফুটবলকন্যারা ভারতের কুচবিহারে ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন
রংপুর অফিস | ৫ মে, ২০২৩, ১০:৩৫ AM
রংপুরের নিভৃত পল্লীর ফুটবলকন্যারা ভারতের কুচবিহারে ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন

রংপুরের নিভৃত পল্লী সদ্যপুষ্কুরিনীর নয়াপুকুর-পালিচড়ায় দেশের নারী ফুটবলের পুরোটেই যেন ঘিরে আছে।এ গ্রামের ফুটবল কন্যারা ভারতের কুচবিহারে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে দেশ ছেড়েছেন ।সেখানকার ১৪ জন ফুটবলার সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন।বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকালে যাত্রা নারী ফুটবলারদের দলটি বিকেলে কুচবিহারের দেওয়ানগঞ্জের পৌঁছেছে।

জানা গেছে, রংপুরের মেয়েরা মাঠে নামবে আগামী ৭ মে রোববার।ভারতের দেওয়ানগঞ্জ কোচিং ক্যাম্প নক আউট টুর্নামেন্ট-২০২৩ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন । বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে চারটায় গোমটু ভুটানের মুখোমুখি হবে সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাব। জয়ের প্রস্তুতি নিয়েই দেশে ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন, ক্লাবের প্রশিক্ষক সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের কোর্চ মিলন মিয়া ।

রংপুরের সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের অধিনায়ক সুলতানা আক্তার বলেন, আমরা রংপুরের হয়ে খেললেও সবাই আমাদেরকে বাংলাদেশের মেয়ে হিসেবেই দেখবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে লাল-সবুজের জয় ও সম্মানের জন্য খেলব ইনশাআল্লাহ্। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

দলের গোলরক্ষক শাম্মী আক্তার ও খেলোয়াড় ইন্মিমা খানম বলেন, আমরা সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের হয়ে ভারতে খেলব। আমাদের জন্য এখান থেকেও অনেক কিছু শেখার ও অর্জনের সুযোগ রয়েছে। সবার কাছে আমরা দোয়া চাই। আমরা যেন শুধু রংপুর নয়, পুরো বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।

সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের কোর্চ মিলন মিয়া বলেন, ক্লাব থেকে ১৪ জন খেলোয়াড়কে নিয়ে সীমিত পরিসরে এবার ভারত সফরে যাওয়া হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের মেয়েরা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। আশা করছি আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরব ইনশাআল্লাহ্।এই টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করায় আমাদের খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতাও আর সমৃদ্ধ হবে আশা করছি। সরকার বা সংশ্লিষ্টদের আরো বাড়ানো হলে সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোটিং ক্লাবের মেয়েরা দেশের ফুটবল অঙ্গনে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে।

প্রসঙ্গত, রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্কুরিনী ইউনিয়ন।শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ইউনিয়নে ফুটবল দিন দিন পাচ্ছে জনপ্রিয়তা।সে জন প্রিয়তা আসছে এখানকার ফুটবল কন্যাদের হাত ধরে। এক অজপাড়াগাঁ থেকে জাতীয় নারী ফুটবল দলসহ অনূর্ধ্বভিত্তিক দল ও বিভিন্ন ক্লাবে এ পর্যন্ত খেলছে ১৭ জন। দেশ-বিদেশে ভালো খেলে সুনামও কুড়িয়েছে তারা। নিজেদের পরিচয় মেলে ধরার স্বপ্ন অর্জনে রেখেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাদের ফুটবল ম্যাজিকে সদ্যপুষ্কুরিনী এখন নারী ফুটবলারদের এলাকা হিসেবে পরিচিত।২০১১ সালে প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে এ গ্রামের ৪০ জন ক্ষুদে কিশোরী ফুটবল খেলা শুরু করে। সে বছরই পালিচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী ফুটবলাররা রংপুর বিভাগের হয়ে নেতৃত্ব দিয়ে রানার্স আপ হয়। পরের বছরই দেশসেরা ফুটবল দল হয় তারা। এর পর থেকে শুধু সাফল্যই এসেছে। কখনো চ্যাম্পিয়ন নয়তো রানার আপ। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের পাশাপাশি সারাদেশের মধ্যে ওরা বরাবরই সেরা ছিল। ভালো খেলোয়াড় থাকায় সদ্যপুষ্কুরিনী থেকে অনেকেই জাতীয় দলে এবং বয়স ভিত্তিক দলের পাশাপাশি ক্লাবগুলোতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।

সদ্যপুষ্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের অনেকেই দেশের হয়ে তাজিকিস্তান, ভুটান, ভারতে খেলেছেন। তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে ভারতকে ৯-০ গোলে হারিয়ে সেবার বাংলাদেশ শিরোপা জয়ী হয়েছিল। ওই দলে তিন ফুটবলার লাবণী আক্তার, আর্শিতা জাহান ও আঁখি আক্তার খেলেছেন।সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়ন ও এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে কৃতিত্বের জন্য গ্রামের সুলতানা, লাভলী, রতœা সহ বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আর্থিক সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছে। এরপর থেকে গ্রামের অনেক মেয়ে ফুটবলে আসতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখানকার স্বপ্না, রতœা, মৌসুমি, রুনা, রুমি, সুলতানা, বৃষ্টি, লাবণী, মৌরসী, আশা অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে খেলেছে।সদ্যপুষ্কুরিনীর মেয়েদের মুকুটে দফায় দফায় বাড়ছে সাফল্যের পালক। দেশের নারী ফুটবলের পুরোটেই যেন ঘিরে আছে রংপুরের নিভৃত পল্লী সদ্যপুষ্কুরিনীর নয়াপুকুর-পালিচড়ায়। নেপাল বিজয়য়ের পর যুব গেমসে স্বর্ণ পদক ছাড়াও একের পর এক সাফল্য।

এফসি অনুর্ধ-১৭ তেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়নে নেতৃত্বে দিয়েছে সদ্যপুষ্কুরিনীর জয়নব বিবি রিতা।গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নেপালকে হারানোর ১০ নম্বর জার্সি পরিহিত খেলোয়াড় ছিলেন পালিচড়ার ইসরাত জাহান স্বপ্না। সেই আনন্দ ফুরাতে না ফুরোতেই অনুর্ধ-১৭ যুব গেমসে স্বর্ণ পদক প্রাপ্তি। যদিও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেই যাত্রা। বার বার সাফল্যে সদ্যপুষ্কুরনী যুব স্পোটিং ক্লাবের জুনিয়র ফুটবলারদের আনন্দের মাত্রাটা একটু বেশিই-বৈকি।

এই বিভাগের আরও খবর