লালমনিরহাট বার্তা
বর ও তাঁর বাবাকে কান ধরে উঠবস করার ভিডিও ফেসবুকে দেওয়ায় থানায় অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, পাটগ্রামঃ | ২০ সেপ, ২০২২, ১১:৪৩ AM
বর ও তাঁর বাবাকে কান ধরে উঠবস করার ভিডিও ফেসবুকে দেওয়ায় থানায় অভিযোগ

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বর ও তাঁর বাবাকে কান ধরে উঠবস করার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ায় পাটগ্রাম থানায় অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী বরের বাবা ফজলুল হক (৫৫)। বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে উঠবস করান ওই উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হাসান আশরাফী সোহেল।

জানা গেছে, জোংড়া ইউনিয়নের সরকারেরহাট এলাকার আজিজুল ইসলাম অলির মেয়ের সাথে বাউরা ইউনিয়নের হোসেনাবাদ এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ফরিদুল ইসলামের বিয়ের কথা হয়। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বর ও বরের বাবা লোকজন নিয়ে কনের বাড়িতে যান। বিয়ের আগে যৌতুকের টাকা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়। এ সময় রাকিবুল হাসান আশরাফী সোহেল খবর পেয়ে কনের বাড়িতে যান। বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগের কথা শুনে বর ও তাঁর বাবাকে মামলা দিয়ে পুলিশে দিতে চান তিনি (রাকিবুল হাসান আশরাফী সোহেল)। এ সময় বর ফরিদুল ইসলাম ও বরের বাবা ফজলুল হক ভুল স্বীকার করলে আশরাফী সোহেল কান ধরে উঠবস করার কথা বলেন। বর ও বরের বাবা ও ঘটক কান ধরে উঠবস করার সময় বাল্যবিয়ে ও যৌতুক চাবোনা বলে বর ও বরের বাবাকে শপথ বলাতে থাকেন। গভীর রাতে ওই সময় আশরাফী সোহেল তাঁর নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ ও নিজের ফেসবুক আইডি দিয়ে লাইভ প্রচার করতে থাকেন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হলে গোটা উপজেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার তৈরি হয়। এ ঘটনায় গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে পাটগ্রাম থানায় অভিযোগ দেন বরের বাবা ফজলুল হক। ফজলুল হক দাবি করে বলেন- ‘ঘটনার দিন সোহেল তাঁদের কান ধরিয়ে উঠবস করার ভিডিও ছড়িয়ে দিবেন বলে হুমকী দিয়ে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। মান-সম্মানের ভয়ে বাধ্য হয়ে পরদিন ১৭ সেপ্টেম্বর ৩০ হাজার টাকা সোহেলকে দেওয়া হয়। টাকা নেওয়ার পরও তিনি ভিডিওটি নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন। ভিডিও দেখে এলাকার লোকজন নানা কথা বলছেন। লজ্জায় কোথাও যেতে পারছিনা। মনে হয় আত্মহত্যা করি। এ কারণে পাটগ্রাম থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

আজিজুল ইসলাম অলি বলেন, ‘বরের বাবা জোর করেই বিয়ে ঠিক করে। ঠিক করার দিন ১৫ হাজার টাকা বরের বাবাকে দিই। বিয়ের দিন ৫০ হাজার ও পরবর্তীতে বাকি টাকা দেওয়ার কথা হয়। কিন্তু বিয়ে করতে এসে এক লাখ চায় না হলে বিয়ে হবে না বলে বরের বাবা জানায়। গরীব মানুষ টাকা কোথায় পাই। ঘটনা সোহেল ভাইকে জানালে তিনি এসে তাঁদেরকে থানায় দিতে চাইলে তাঁরা নিজেরাই কান ধরে উঠবস করে।’

রাকিবুল হাসান আশরাফী সোহেল বলেন, ‘এলাকার হতদরিদ্র ভ্যান চালক অলির নাবালিকা মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে বরের বাবা ফরিদুল ইসলাম। পরবর্তীতে নগদে যৌতুকের দ্বিগুণ টাকা দাবি করে। বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলি। বাল্যবিয়ে ও যৌতুকের টাকার চাপের কথা বর ও বরের বাবা এবং ঘটক স্বীকার করেন। এ কারনে থানায় দিতে চাইলে তাঁরা নিজেরাই ভুল স্বীকার করে কান ধরে উঠবস করেছে। আমি এসব ভিডিও করে আমার ফেসবুক আইডিতে লাইভ করি। ফেসবুকে লাইভ করাটা ঠিক হয়নি। আমি কোনো টাকা নিইনি। যৌতুকের নেওয়া অগ্রিম টাকা ও খরচ বাবদ ৫ হাজারসহ ২০ হাজার টাকা বরের বাবা কনের বাবাকে দিয়েছে।’

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, ‘কান ধরিয়ে উঠবস করানোর একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে।’

এই বিভাগের আরও খবর