লালমনিরহাট বার্তা
রংপুরে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ পালিয়েছে অভিযুক্ত ইমাম
রংপুর অফিসঃ | ১০ মে, ২০২২, ৬:০৬ AM
রংপুরে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণ পালিয়েছে অভিযুক্ত ইমাম
রংপুরের পীরগাছায় তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠছে মাহফুজার রহমান নামে এক মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধ। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও অভিযুক্ত মাহফুজার রহমানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ শিশুটি রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছে।অভিযুক্ত মাহফুজার রহমান (৩০) নাগদাহ কেরামতিয়া মসজিদের ইমামতি করেন। পাশাপাশি তিনি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। তার এমন কান্ডে হতবাক এলাকার মানুষ। অভিযুক্ত যতো প্রভাবশালীই হোক না কেন, দ্রæত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে ঘটনার পাঁচদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত আসামি গ্রেফতার হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী। পলাতককে দ্রæত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নেয়ার দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার দুপুর বারোটার দিকে পীরগাছা উপজেলার বড়দরগাহ্ বাজারে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীর পরিবার জানান, গত ৫ মে বৃহস্পতিবার পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৈয়ব বিলবাড়ী গ্রামে বাড়ির পাশে খেলা করছিলেন তিন বছরের শিশু। এসময় প্রতিবেশী মফিজুর রহমান মৌলভীর ছেলে মাহফুজার রহমান চকলেট ও খেলনা দেয়ার সুযোগে নিজের শোবার ঘরে শিশুটিকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টায় চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত।
ঘটনার পরদিন শুক্রবার শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রথমে পীরগাছা থানায় এবং পরে মাহিগঞ্জ থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। পরে মাহিগঞ্জ থানা থেকে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে রমেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নিয়ে যান। এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে মাহিগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আলম জানান, একজন ইমামের এমন জঘন্য অপরাধ গ্রামের সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। অভিযুক্ত মাহফুজারকে দ্রæত আইনের আওতায় না নেওয়াতে এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই সে যেন আইনের ফাঁক গলিয়ে পার না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। রংপুর জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান রোজি রহমান বলেন, এ ঘটনায় আমি ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। অভিযুক্ত ওই ইমামের চূড়ান্ত শাস্তি দাবি করছি। মসজিদ ও মাদ্রাসার যারা পরিচালনায় রয়েছে, তাদের এই বিষয়গুলো যাচাই করে দেখা উচিত।
তবে অভিযুক্তের স্বজনরা বলছেন, ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করেছে বাদীপক্ষ। তাদের দাবি- জমি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধের জের থেকেই সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এনিয়ে রোববার (০৮ মে) দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে নিজের স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক বলছেন অভিযুক্ত ইমামের স্ত্রী সাথী বেগম। তিনি বলেন, শিশু ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা। মূলত মামলার বাদী বিউটি আক্তারের স্বামী মফিজুল ইসলামের সাথে একটি জমি বন্ধকির অর্থ লেনদেনের ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষী হওয়াকে কেন্দ্র করে পারিবারিক ঝামেলা তৈরি হয়। এতে আমরা স্বামী মাহফুজার রহমান বিউটির পরিবারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন মফিজুল ও বিউটি। তাদেরকে পূর্বশত্রæতা থেকে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রকাশ্যে ইন্ধন দেন মোহাম্মদ হোসেন ও তার লোকজন। অথচ পুরো ঘটনাটি পারিবারিক বিরোধ ও জমি সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে।
অভিযুক্তের বড় ভাই মুক্তার হোসেন বলেন, আমার ভাইকে এর আগেও এমন একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আদালত থেকে মাহফুজার নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। এখন নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ঘটনা যদি সত্য না হয়, তাহলে হয়রানি করার জন্য আমিও মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিচার দাবি করছি।
রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের করতে চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারব। আর আইনগত যেসব প্রক্রিয়া আছে, নির্যাতিতার যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়ার দরকার তা আমরা যথাযথভাবে দিচ্ছি।
এই বিভাগের আরও খবর