লালমনিরহাট বার্তা
ইসলাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং মুসলমানরা হচ্ছে সর্ব নিকৃষ্ট অনুসারী
মোহাম্মদ ইয়ার আলী | ২৯ এপ্রি, ২০২৪, ৮:৪৯ AM
ইসলাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং মুসলমানরা হচ্ছে সর্ব নিকৃষ্ট অনুসারী

কেন এই অপরাধী? পৃথিবীতে প্রায় 200 কোটির মত মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী বলে তথ্য পাওয়া যায়। প্রকৃত তথ্য আল্লাহ ছাড়া কেউ হয়তো জানে না কিন্তু এই বৃহৎ একটি ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এমন একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে, যে সবাই ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলোকে এড়িয়ে সাধারণ বিষয়গুলোকে এবং স্বার্থের অনুকূলের বিষয়গুলোকে পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।প্রতিকূলের বিষয়গুলোকে মোটেই গ্রহণযোগ্য হিসেবে তারা মনে প্রাণে নিচ্ছে না।

ইসলামের মৌলিক বিষয় হল বিশ্বাস বা ঈমান ।যে কাজে বা যে বিশ্বাসে স্রষ্টা বা আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন এবং তার এক মালিকানায় অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা হবেন সেই ধরনের বিশ্বাস থেকে দূরে থাকাই হল ঈমান। সাথে নিরঙ্কুশ ভাবে তার সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস স্থাপন করার নাম ঈমান। এই তথ্য যিনি বা যাহারা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাদেরকে বিশ্বাস করাও ঈমানের একটি অংশ।যেমন নবীদের প্রতি ঈমান।

বর্তমান বিশ্বে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমাদের অনেকটাই চির ধরেছে। মৌলিক বিশ্বাস হল আল্লাহ যে নীতি,আদর্শ,হুকুম মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন মানুষের পক্ষে হোক বিপক্ষে হোক তা পালন করিতে মানুষ বাধ্য ।তাহলেই আল্লাহর একছত্র মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।কিন্তু যদি অনুকূলের বিষয়গুলোকে পালন করা হয়, আর প্রতিকূলের বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাওয়া হয়,তাহলে অবশ্যই সেটা সেই এক এক ধরনের প্রতারণা। মানুষ স্রষ্টার সঙ্গে এই ধরনের প্রতারণা কখনোই করতে পারে না। স্রষ্টা কখনোই অন্ধ নয়,স্রষ্টা কখনো অদূরদর্শী নয় ।স্রষ্টা হল মনের খবর রাখার মত মালিক।

কিভাবে আমরা সর্ব নিকৃষ্ট অনুসারী হলাম-

বর্তমানে যদি মুসলমানের ধর্মীয় অনুশাসন পরিপালনের প্রতিটি দিক পর্যালোচনা করা যায় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে ধর্মের প্রতারক হিসেবে বা ধর্মের প্রতিকূলের অনুসারী হিসেবে সহজে প্রমাণ করা যায়।

১)আমরা সবাই ধর্মের অনুশাসনের ভান ধরি কিন্তু প্রকৃত অনুশাসন মানার ব্যাপারে এবং জানার ব্যাপারে আমাদের অপরিমানদর্শিতা প্রকাশিত।

২)ধর্মীয় অনুশাসন পরিপালনের ক্ষেত্রে আমরা মানুষকে উপদেশ দেওয়ার জন্য যতটা উদগ্রীব হয়ে থাকি।নিজের পরি পালনের জন্য একেবারেই অনাগ্রহ প্রদর্শন করে থাকি ।এতে আমাদের নিজেদের মধ্যেই এক ধরনের প্রতারণার মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।

৩) ধর্মের প্রতিকূল বিষয়গুলো কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের জন্য কঠিনতম হয়ে দাঁড়ায় সেই ক্ষেত্রে আমরা কেহই ইহা পরিপালনের ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রদর্শন করি না।

৪)ধর্মীয় অনুশাসন পরিপালনের জন্য বিচার ব্যবস্থায় এক বিরাট পরিবর্তন দরকার কিন্তু এই পরিবর্তন নিঃস্বার্থ এবং ধর্মের মালিক বা স্রষ্টার কাছে জবাবদিহিতামূলক হতে হবে।প্রতিটি কাজের জবাব একদিন না একদিন আমাদের কারো না কারো কাছে করতে হবে এই ভীতি সমাজ থেকে প্রায় উধাও হয়ে যাচ্ছে। আমাদের মনে আমাদের কাজের এখন কোন জবাবদিহিতার আশঙ্কা উদীয়মান হচ্ছে না।

৫) আমরা নিজেরাই বোধগম্য করিতে পারিতেছি না,যে এত বড় একটি গাইড বই বা কোরআন শরীফ, এতগুলো হুকুম লেখা শুধু কি পাঁচটি কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ? নাকি এর মধ্যে আরও কিছু বিধি নিষেধ আইন-কানুন রয়েছে ?যদি থাকে তাহলে উহা পালনের প্রয়োজনীয়তা আমাদের রয়েছে কিনা?

৬)যদি ধর্মীয় বিধি-বিধান নামাজ ,রোজা,হজ,যাকাত , কলেমা বা দান-খয়রাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো,তাহলে এত বড় বইয়ের এত উদাহরণ, এত আদেশ, এত নিষেধ, কেন আল্লাহপাক নবীর মাধ্যমে আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন? আমাদের বিবেক সেই প্রশ্নটি করতে চায় না।আমি নিজেই তার সাক্ষী। আমি নিজেই বিবেকের কাছে পরাজিত সৈনিক।

৭) একজন মানুষ সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে অবৈধতাকে গুরুত্ব না দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি করে বা আত্মসাৎ করে, দায়িত্ব অবহেলা করে অথবা দায়িত্ব থেকে অর্থ আয়ের অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে,সেই অর্থে সংসার চালায়ে মানুষকে ধর্মীয় উপদেশ যখন প্রদান করে,তখন নিজের বিবেকের কাছে ধিক্কার আসে ধর্ম কি এরকমই।

৮) একজন প্রতারক ভন্ড যখন ধর্মীয় লেবাস পরিধান করে ধর্মকে বিক্রি করে সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে আর মানুষ এই বিষয়টাকে অবলোকন করে তখন কিছু সংখ্যক মানুষ তাদের দ্বারা ধর্মকে এরকমই মনে করে নিজেও সে কাজে জড়িত হয়ে পড়ে।এই প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ী,ধর্ম লেবাসধারী ব্যক্তিদের দ্বারা ধর্ম সংকুচিত হয়ে চলে এসেছে।

৯)ধর্মীয় রীতি নীতি যদি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিপালিত না হয় তাহলে কখনোই একটি ধর্মকে পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করার সুযোগ থাকে না বা সুযোগ সৃষ্টি হয় না।রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মকে অস্বীকার করে যারা ধর্ম পরিপালন করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে তারাও ধর্মীয় প্রতারক অথবা স্রষ্টার সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছে বলে পরিগণিত হচ্ছে।

১১) এক একটি দল বা একটি গুষ্টি ধর্মের একেকটি ভিত্তিতে শক্তিশালী ভাবে পরিপালন করে অবশিষ্ট গুলোকে অস্বীকার বা পরিপালনে অনীহা প্রকাশ করতেছে।অবশ্যই এই সমস্ত ব্যক্তিরাও স্রষ্টাকে বা স্রষ্টার পূর্ণাঙ্গ ধর্মকে অস্বীকার করতেছে বলে মনে হয়।

১০) রাস্তা পারাপার বা চলার ক্ষেত্রে ধর্মীয় যে নীতি রয়েছে ততটুকুকেও যারা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না।তারা অবশ্যই ধর্মের একজন নিকৃষ্ট অনুসারী এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

ধর্মীয় রীতিনীতি পরিপালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে যে সমস্ত দেশ অগ্রগামী রয়েছে তাদের একটি পরিসংখ্যান নিম্নে তুলে ধরা হলো ।তবে এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে স্রষ্টাকে বিশ্বাস না রেখেই ধর্মীয় অনুশাসন পরিপালন করে ধর্মের পার্থীব্য সুবিধা গুলি কি গ্রহণ করে চলেছে ।

পৃথিবীর কোন দেশ কতখানি ইসলামিক এই নিয়ে গবেষণা করেন জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হুসেন আসকারী। ইসলাম ধর্মে রাষ্ট্র ও সমাজ চলার যে বিধান দেয়া হয়েছে তা যে দেশগুলি প্রতিদিনের জীবনে মেনে চলে তা খুঁজতে যেয়ে দেখা গেলো - যারা সত্যিকার ভাবে ইসলামিক বিধানে চলে তারা কেউ বিশ্বাসী মুসলিম দেশ নয়।স্টাডিতে দেখা গেছে সবচেয়ে ইসলামিক বিধান মেনে চলা দেশ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড এবং দ্বিতীয় অবস্থানে লুক্সেমবার্গ। তারপর এসেছে পর্য্যায়ক্রমে আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ষষ্ঠ ও কানাডা সপ্তম অবস্থানে। মালয়েশিয়া ৩৮তম, কুয়েত ৪৮তম, বাহরাইন ৬৪তম, এবং অবাক করা কান্ড সৌদি আরব ১৩১তম অবস্থানে। গ্লোবাল ইকোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বাংলাদেশের অবস্থান সৌদীদেরও নীচে।গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলমানরা নামাজ, রোজা, সুন্নাহ, কোরআন, হাদিস, হিজাব, দাড়ি, লেবাস নিয়ে অতি সতর্ক কিন্তু রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ইসলামের আইন মেনে চলেনা।মুসলমানরা পৃথিবীর সবার চেয়ে বেশি ধর্মীয় বয়ান,ওয়াজ নসিহত শোনে কিন্তু কোন মুসলিম দেশ পৃথিবীর সেরা রাষ্ট্র হতে পারেনি। অথচ গত ষাট বছরে মুসলমানরা অন্ততঃ ৩০০০ বার জুমার খুতবা শুনেছে।একজন বিধর্মী চাইনিজ ব্যবসায়ী বলেছেন, মুসলমান ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে এসে দুই নম্বর নকল জিনিষ বানানোর অর্ডার দিয়ে বলে, অমুক বিখ্যাত কোম্পানির লেবেল লাগাবেন। পরে যখন তাদেরকে বলি আমাদের সাথে খানা খান, তখন তাঁরা বলেন, হালাল না, তাই খাবোনা। তাহলে নকল মাল বিক্রি করা কি হালাল? একজন জাপানি নব্য মুসলিম বলেছেন, আমি পশ্চিমা দেশগুলিতে অমুসলিমদের ইসলামের বিধান পালন করতে দেখি, আর পূর্বের দেশগুলিতে ইসলাম দেখি কিন্তু কোন মুসলিম দেখিনা। আলহামদুলিল্লাহ, আমি আগেই ইসলাম এবং মুসলমানদের পার্থক্য বুঝেই আল্লাহর ধর্ম গ্রহন করেছি।ইসলাম ধর্ম শুধু নামাজ রোজা নয়, এটি একটি জীবন বিধান এবং অন্যের সাথে মোয়ামালাত আর মোয়াশারাতের বিষয়। একজন নামাজ রোজা পড়া আর কপালে দাগওয়ালা মানুষও আল্লাহর চোখে একজন মোনাফেক হতে পারে।নবী (সাঃ) বলেছেন, "আসল সর্বহারা আর রিক্ত মানুষ হচ্ছে তারা, যারা কেয়ামতের দিন রোজা, নামাজ, অনেক হজ্জ্ব, দান খয়রাত নিয়ে হাজির হবে কিন্তু দুর্নীতি করে সম্পদ দখল, অন্যদের হক না দেয়া, মানুষের উপর অত্যাচারের কারণে রিক্ত হস্তে জাহান্নামে যাবে।"ইসলামের দুটি অংশ, একটি হচ্ছে বিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা যাকে 'ঈমান' বলা হয়, আর একটি হচ্ছে বিশ্বাসের অন্তর্গত বিষয় যাকে 'এহসান' বলা হয়,-- যা ন্যায়গতভাবে সঠিক সামাজিক নিয়ম কানুন মেনে চলার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়। দুটোকে একত্রে প্র্যাকটিস না করলে ইসলাম অসম্পূর্ন থেকে যায় যা প্রতিটি নামের মুসলমান দেশে হচ্ছে।ধর্মীয় বিধি নিষেধ মানা যার যার ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং এটি আল্লাহ ও বান্দার মধ্যকার বিষয়। কিন্তু সামাজিক বিধি নিষেধ মেনে চলা একজন বান্দার সাথে অন্য বান্দার মধ্যকার বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর