লালমনিরহাট বার্তা
দুই শত ছয় কোটি টাকার ধরলা সেতুর সুবিধা পাচ্ছে না লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামবাসী
শহিদ ইসলাম সুজন | ২৪ নভে, ২০২২, ১:৩৯ PM
দুই শত ছয় কোটি টাকার ধরলা সেতুর সুবিধা পাচ্ছে না লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামবাসী

লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলার ব্যবসা বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল ও দুই জেলার সাধারন মানুষের যাতায়াত সহজ করার লক্ষ্যে ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ধরলা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধনের পাঁচ বছরেও সুফল পাচ্ছে না এই দুই জেলার। ধরলা সেতুর প্রবেশপথ লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় রতœাই নদীর উপর বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রশস্থ হওয়ায় সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষের।

স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়িরা জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকায় রতœাই নদীর উপর বেইলি ব্রিজটি ঝুঁকিপুর্ণ ও অপ্রশস্ত হওয়ার কারণে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলা এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকান্ডও তেমন গতি পাচ্ছে না। বেইলি ব্রিজটির কারণে ব্যবসায়িরা নবনির্মিত ধরলা সেতুর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্রিজটি ঝুঁকিপুর্ণ ও অপ্রশস্থ হওয়ায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না। সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মিত না করায় ধরলা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা ধরলা সেতু দিয়ে বাস, ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার লাখো মানুষ। এই ব্রিজের কয়েক জায়গায় পাটাতনের স্টিলের পাত উঠে গেছে। তাতে ঝালাই ও জোড়াতালি দিয়ে চলছে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙ্গে যেতে পারে। এতে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রংপুর ও লালমনিরহাটের সঙ্গে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভরুঙ্গামারী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। এদিকে বেইলি ব্রিজ দিয়ে পাঁচ টনের বেশি পণ্য পরিবহন না করতে সতর্কতা জারি করেছে লালমনিরহাট সড়ক বিভাগ।

২০১৮ সালের ৩০ জুন শেখ হাসিনা ধরলা সেতু উদ্বোধন করা হয়। নদীশাসন ও সংযোগ সড়কসহ এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ৯৫০ মিটার দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে প্রথমদিকে বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। জেলা সড়ক বিভাগ জানিয়েছেন আগামি ৩০ নভেম্বর টেন্ডার ওপেন করা হবে। টেন্ডারের কার্যক্রম শেষ হলেই ব্রিজ নির্মানের কাজ শুরু হবে।

লালমনিরহাট জেলার আলু ও পেয়াজ ব্যবসায়ী কল্লোল আহমেদ জানান, সংযোগ সেতুটি হতে পারে দুই জেলার অর্থনীতির কর্মকান্ডের লাইফ লাইন। কিন্তু 'রতœাই নদীর ওপর ঝুঁকিপুর্ণ ও অপ্রশস্ত বেইলি ব্রিজটির ওপর দিয়ে বড় আকারের পণ্যবাহী যান চলাচলে করতে না পাড়ায় ফুলবাড়ীসহ কুড়িগ্রামে পণ্য পরিবহনে আমাদের বেশি খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, 'এ বেইলি ব্রিজটি আমাদের ব্যবসা-বানিজ্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নবনির্মিত ধরলা সেতুর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।'

আরেক ব্যবসায়ি মিনহাজুল ইসলাম বলেন, 'এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উনয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে ২০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ধরলা সেতুটিকে ব্যবহার করতে হবে। রতœাই নদীর ওপরের বেইলি ব্রিজটিকে যত দ্রæত সম্ভব একটি শক্তিশালী ও প্রশস্ত সেতু দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে।

কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ধরলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রী দুই জেলার মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। কিন্তু রতœাই নদীর ওপর বেইলি ব্রিজটি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন মানুষ।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি শেখ আব্দুল হামিদ বাবু বলেন, ভগ্ন রতœাই বেইলি ব্রিজের স্থলে নতুন সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই জেলার অর্থনীতির চিত্র। কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। 'রতœাইয়ের ওপর একটি নতুন সতুর জন্য তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। 'যদি রতœাই নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর জায়গায় একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়, তাহলে আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগ দ্রæত ব্যবস্থা নিয়ে নতুন সেতু নির্মাণ করবে এটা আমাদের দাবি।

লালমনিরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার জানান,বেইলি ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সর্ম্পন্ন হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহাদয় খুবই আন্তরিক ব্রিজটি নির্মানে। আগামি ৩০ তারিখ টেন্ডার ওপেন হবে। টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে দ্রæত সময়ের মধ্যে ব্রিজ নির্মানের কাজ শুরু হবে।

এই বিভাগের আরও খবর