লালমনিরহাট বার্তা
পোশাক কারখানায় অস্থিরতা নিয়ে যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
বার্তা অনলাইন ডেস্ক | ৫ সেপ, ২০২৪, ৬:২০ AM
পোশাক কারখানায় অস্থিরতা নিয়ে যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে তৈরি পোশাক কারখানায় অস্থিরতার নেপথ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের “ঝুট ব্যবসা” বলে জানা গেছে। তারা কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছেন। এই অভিযোগ খোদ পোশাক শ্রমিক নেতাদের। তবে মালিকরা বলছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৃতীয় পক্ষ এখানে সক্রিয়।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সোমবার রাত থেকেই সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। মঙ্গলবারও কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতারা।

শ্রমিক নেতারা মঙ্গলবার শিল্প উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে তারা পোশাক শ্রমিকদের শান্ত থেকে কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে শিল্প মালিকরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে শিল্পের নিরাপত্তা চেয়েছেন।

বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, “কিছু পোশাক কারখানায় অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা আছে। সেটা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। কিছু কারখানায় বেতন বকেয়া, হাজিরা, বোনাস, টিফিন ভাতা ও শ্রমিক ছাঁটাই নিয়ে অসন্তোষ ছিল। এটা নিয়ে কয়েকদিন ধরে কিছুটা শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। কিন্তু সোমবার যে ৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, তা নিরাপত্তার কারণে। বহিরাগতরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা চালালে ওই কারখানাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

তিনি বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পরও ঝুট ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখতে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা বহিরাগতদের দিয়ে পোশাক কারখানায় হামলা চালায়। পোশাক কারাখানার ওয়েসটেজ এই ঝুট ব্যবসায় আছে কোটি কোটি টাকা। আর এই ব্যবসা রাজনৈতিক প্রভাবশালীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন।”

কয়েকদিন আগে থেকে পোশাক কারখানা এলাকায় অস্থিরতা শুরু হলেও ১ সেপ্টেম্বর প্রথম ১০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়, ওইদিন কয়েকটি কারখানায় হামলা হয়। ২ সেপ্টেম্বর পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। হামলার কারণে ৫০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবারও ১০টির মতো কারখানা বন্ধ ছিল। তারা নিরাপত্তার কারণে কারখানা খোলেনি।

এই পরিস্থিতির শুরু হয় বিভিন্ন সময় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে। তারা চাকরীচ্যুতদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়া এবং পোশাক কারখানায় কমপক্ষে ৫০% পুরুষ নিয়োগের দাবিতে কয়েকদিন আগে আন্দোলন শুরু করেন। বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের প্রায় ৮০% নারী।

“বেকার আন্দোলন” নামের ওই সংগঠনের নেতা শহীন আহমদে বলেন, “তবে পোশাক কারখানায় যারা হামলা করেছে, তারা আমাদের কেউ নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলাম। যারা হামলা করেছে তারা বহিরাগত। তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে।”

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সরোয়ার হোসেন বলেন, “কারা ক্ষমতায় এলো আর কারা ক্ষমতা ছাড়লও সেটা আমাদের বিষয় নয়। আমরা শ্রমিকরা শিল্প উৎপাদন ঠিক রাখতে চাই। আমাদের শ্রমিকদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে, সেগুলো আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আদায় করতে চাই। কিন্তু এখন যারা পোশাক কারখানায় হামলা করেছে তারা কোনো শ্রমিক নয়। কোনো একটি গোষ্ঠী এই খাতকে অস্থিতিশীল করতে এই হামলা চালিয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচিও দেইনি। কোনো কোনো পোশাক কারখানায় অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি ছিল। তারই সুযোগ নিয়েছে হামলাকারীরা।”

গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে দেড় হাজারের বেশি পোশাক কারখানা আছে। একটি কারখানার শ্রমিকরা বাইরে এলেই এক-দেড় হাজার শ্রমিকের বিক্ষোভে পরিণত হয়। মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান বলেন, “কোনো কারখানার শ্রমিকরা বাইরে আসেনি। তারপরও হামলা কারা করলো সেটা তদন্ত হওয়া দরকার। শিল্প উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, শ্রমিকদের যে যৌক্তিক দাবি আছে তা ধীরে ধীরে পূরণ করা হবে। তাদের সময় দিতে হবে। আর এর সঙ্গে ২০২৩ সালে ২০ হাজার শ্রমিককে আসামি করে যে ৪৩টি মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছি।”

আশুলিয়া এলাকায় মঙ্গলবারও কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। তারা কিছুক্ষণের জন্য সড়ক অবরোধ করেন।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, “মঙ্গলবার তিন-চারটি কাখানায় কিছুটা ঝামেলা ছিল। আগের দিন বন্ধ করে দেওয়া ওই কারখানাগুলো মঙ্গলবারও না খোলায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। রাস্তার পাশের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কও অবরোধ করেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।”

তিনি বলেন, “সোমবার রাত থেকেই পুলিশ ও সেনা সদস্যরা যৌথ অভিযান শুরু করে। এখনো কারখানার নিরাপত্তায় টহল অব্যাহত আছে।”

এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে বেশ কয়েকটি স্থানে পোশাক শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। সকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস, ছয়দানা, হাজির পুকুর, মালেকের বাড়ি, সাইনবোর্ড এলাকায় বিক্ষোভ করেন। শ্রমিক বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে শ্রমিকদের ইট-পাটকেলে শিল্প পুলিশের এএসপি মোশরাফ হোসেনসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত এসপি ইমরান হোসেন বলেন, “সকাল থেকেই গাজীপুরের বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন পোশাক কারখানার চাকরীচ্যুত শ্রমিকেরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।”

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “পোশাক কারখানায় সমস্যা কিছু না কিছু সবসময়ই থাকে। আমরা সেটা অভ্যন্তরীণভাবে সমাধান করি। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তা অপ্রত্যাশিত। আমরা মনে করি এর সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত নয়। তৃতীয় কোনো পক্ষ যারা অস্থিতিশীল পরিবেশ করতে চায় তারা এটা করেছে। তাদের চিহ্নিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।”

এই বিভাগের আরও খবর