লালমনিরহাট বার্তা
প্রাথমিকের উপবৃত্তির টাকা তুলতে হয়রানি
স্টাফ রিপোর্টার | ২০ জুন, ২০২২, ৮:৫৪ AM
প্রাথমিকের উপবৃত্তির টাকা তুলতে হয়রানি
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দেওয়া সরকারি উপবৃত্তির টাকা তুলতে প্রবল হয়রানির মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও তাঁদের পিতা-মাতা গ্রাম-শহর ঘুরেও টাকা তুলতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও জামা, জুতা এবং ব্যাগ কেনার (কিটস অ্যালাউন্স) টাকা গত সপ্তাহ থেকে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের দেওয়া মা-বাবা বা বৈধ অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে আসতে শুরু করে। শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের মাধ্যমে সরকার এ টাকা প্রদানের চুক্তি করে। সে মোতাবেক প্রতি বিদ্যালয় হতে নগদের সার্ভারে এন্ট্রি করা মোবাইল নম্বরে টাকা আসার মেসেজ দেখে শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা গ্রাম এবং শহরের নগদ অ্যাজেন্ট দোকান গুলোতে ভীড় জমায়। কিন্তু কোনোভাবেই টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে রুপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশের মাধ্যমে এ টাকা বিতরণ করা হত। শিওর ক্যাশ বন্ধের পর নগদের এমএফএস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয় সরকার।
অভিভাবকদের অভিযোগ টাকা উত্তোলনের সর্বশেষ ধাপে গোপন পিন প্রবেশ করালে ডিড নট ম্যাচ আসছে। আগে দেওয়া গোপন পিন সমূহ এমনিতেই পরিবর্তন হয়ে গেছে। পূণরায় নতুন পিন সেট করার চেষ্টা করেও কাজ হচ্ছে না। অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে নগদের (কাস্টমার কেয়ার) গ্রাহক সেবা ১৬১৬৭ নম্বরে ঘন্টার পর ঘন্টা কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের সাহেবডাঙা এলাকার বাসিন্দা সপিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার তৃতীয় ও ছেলে মোস্তাকিন হোসেন ৫ম শ্রেণিতে পাটগ্রাম বালিকা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। উপবৃত্তির জন্য বিদ্যালয়ে দেওয়া আমার মোবাইল নম্বরে টাকা আসার মেসেজ দেখে গত তিনদিন ধরে টাকা তোলার চেষ্টা করছি, টাকা উঠছেনা। নগদের অ্যাজেন্টের দোকান গুলোতে গেলে তাঁরা বলে গোপন পিন ঠিক নাই। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গিয়েও কাজ হচ্ছেনা। এ টাকা তুলতে খুব হয়রানি হতে হচ্ছে।’
উপজেলার পাটগ্রাম ইউনিয়নের টেপুরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মজিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা তোলার জন্য বাবাসহ বাজারে আসছি টাকা তোলা যাচ্ছেনা। গ্রাম থেকে আসা-যাওয়ায় ৬০ টাকা খরচ। কয়দিন যে আসতে হবে আর কবে টাকা তোলা যাবে জানিনা। আগে তো এ রকম সমস্যা হয়নি।’
জগতবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘উপবৃত্তির টাকা আসার মেসেজ অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে এসেছে। আমরা বিদ্যালয়ের অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর নিয়ে নিকটস্থ নগদ অ্যাজেন্ট পয়েন্ট গুলোতে পাঠিয়েছি। এরআগে শিক্ষার্থীদের তাঁদের অভিভাবকদের নগদ এ্যাকাউন্ট খুলে গোপন পিন নম্বর সেট করে মনে রাখতে বলা হয়েছি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করছেন তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না। এভাবে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ জন অভিভাবক ও শিক্ষার্থী আসছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।’
নগদ এআর ট্রেডার্সের কালীগঞ্জ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের ম্যানেজার সোহেল কামাল বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে হ্যাকাররা গিয়ে অনেকের নগদ এ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে। টাকা আসলে তাঁরা (হ্যাকাররা) টাকা তুলে নিবে। এজন্য কোম্পানি শিক্ষার্থীদের টাকার নিরাপত্তার জন্য অটোমেটিক পিন গুলো পরিবর্তন করে দিয়েছে। মাঠে আমাদের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস্ অফিসার বা প্রতিনিধিরা রয়েছে, তাঁরা টাকা উঠানোর নিয়ম জানিয়ে দিচ্ছে। সবার টাকা তোলা যাবে-কোনো সমস্যা হবে না। একটু সময় লাগবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘যে সকল শিক্ষার্থীরা টাকা উঠাতে পারছেনা, নম্বরসহ তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এই বিভাগের আরও খবর