লালমনিরহাট বার্তা
ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ কল্পনাতেই থেকে গেলো!
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ২৫ এপ্রি, ২০২২, ৬:২৫ AM
ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ কল্পনাতেই থেকে গেলো!
খুবই কোলাহলপূর্ণ, বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি পার করলো পাকিস্তান। গত ৯ এপ্রিল বলা চলে, অনেকটা জোর করে ইমরান খানকে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি করা হয়েছে। পাকিস্তানের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের একতরফা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইমরান খানকে সরে যেতে হয়েছে। মধ্যরাতের নাটকীয় অনাস্হা ভোটের পর এক জাতীয় আইকনকে শিষ্টাচারবিহীনভাবে বিদায় নিতে হয়েছে।
প্রায় চার বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ইমরান খানের কিছু ব্যর্থতার পাশাপাশি সফলতাও আছে। চিফ মিনিস্টার পাঞ্জাবস স্ট্রাটেজিক রিফর্মস ইউনিট এর সাবেক মহাপরিচালক সালমান সুফির মতে, ইমরানের বড় সফলতা তিনি তরুণ পাকিস্তানিদের রাজনীতিতে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। এছাড়া বিশ্বের সঙ্গে পাকিস্তানকে আরও শক্তিশালীভাবে সম্পৃক্ত করতে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বে লড়াইয়ে তিনি বড় ভূমিকা রেখেছেন। যদিও সমালোচকরা বলছেন, ইমরানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো অর্থনীতিকে দুর্বল করেছেন। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিরোধীদের লক্ষ্যবস্ত্ত করতে ব্যবহার করেছেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলেছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি নয়া পাকিস্তান (নতুন পাকিস্তান) প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অনাস্হা ভোটে বিদায়ের পর তার নতুন পাকিস্তান গড়ার প্রতিশ্রুতি কল্পনাতেই থেকে গেছে।
অনাস্হা ভোটের পেছনে বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইমরান খান। এখন পার্লামেন্ট ছেড়ে রাজপথের আন্দোলনকে বেছে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু সত্যিটা হলো, তিনি পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাবাহিনীকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলেন। এই সেনাবাহিনী ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খানকে ক্ষমতা আসার পথ করে দিয়েছিল। কিন্তু গত বছর ইমরান খান সেনাবাহিনীর মনোনীত কর্মকর্তাকে ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের প্রধান করতে আপত্তি জানান। এর পরই সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কে তিক্ততা বাড়তে থাকে।
প্রচলিত আছে যে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা। আর আসলে দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হচ্ছে সেনাপ্রধান। এটাও বলা হয় যে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি আর প্রতিরক্ষানীতি ঠিক হয় সেনা সদর দফতরে। সেখানে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর কোনো এখতিয়ারই নেই। যখনই পাকিস্তানে কোনো বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থেকেছে, সেটা যে রাজনৈতিক দলেরই হোক, তাদেরকে একটা আপোষ বা সমঝোতা করতে হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে। কিন্তু সেনাবাহিনীর কিছু কাজে চ্যালেঞ্জ করেই বিপদে পড়তে হয়েছে ইমরান খানকে। যদিও এত নাটকীয়তা আর উত্তেজনার মধ্যে রাজনীতির মূলমঞ্চে দেখা যায়নি সেনাবাহিনীকে।
তবে পরিবর্তন আসছে পাকিস্তানের সমাজে, সেই সঙ্গে রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপের ধরনেও। যার একটি বড় উদাহরণ দেখা গেছে এবারের সংকটের সময়। ইমরান খানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলেও, রাজনৈতিক উত্তেজনার সময় সেনাবাহিনী জানিয়ে দিয়েছিল তারা কোনো পক্ষে নেই।
একই সঙ্গে সামাজিকমাধ্যমের কল্যাণে দেশটির তরুণ প্রজন্ম সামাজিক নানা ইস্যুতে সোচ্চার হচ্ছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। এই তরুণদেরই অনেকে, যারা ইমরান খানের সমর্থক, তারা সেনাবাহিনীর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এখন বিক্ষোভ করছেন রাস্তায়। কিন্তু এই বিক্ষোভ সেনাবাহিনী কর্তৃত্ব আর প্রাধান্য কমানোর মতো সক্ষমতায় কতদিনে পৌঁছাবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। যদি সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব আর প্রাধান্য কমে আসে তাহলে নতুন পাকিস্তান গড়া হয়তো একদিন সম্ভব হতে পারে।(সূত্র: ইত্তেফাক)
এই বিভাগের আরও খবর