লালমনিরহাট বার্তা
আদিতমারীতে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ নতুন কর নিতে এক প্রভাবশালীর নেতার দৌড়ঝাঁপ!
স্টাফ রিপোর্টার | ২৭ অক্টো, ২০২১, ১১:২০ AM
আদিতমারীতে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ নতুন কর নিতে এক প্রভাবশালীর নেতার দৌড়ঝাঁপ!
৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবণ নির্মাণের কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার। ব্যাংক গ্যারান্টিসহ জামানতের টাকাও জমা দিয়েছিলেন। কাজ শেষ করা কথা ছিল চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন। কিন্তু কাজ শুরু না করেই ওই ৩টি বিদ্যালয়ের কাজের বিপরীতে রাখা "পারফরমেন্স সিকিউরিটির" সমুদয় ৪৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা তুলে নিতে ঠিকাদারকে সহযোগিতা করেন আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা ।

সম্প্রতি ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে শোকজ করেন লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন।

এদিকে ওই ৩টি বিদ্যালয়ের কাজ নতুন করে এক প্রভাবশালী নেতাকে পাইয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা। গত মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দিনভর ওই ঠিকাদারকে নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রভাবশালী নেতাসহ চলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক।

জানাগেছে, উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুর্গাপুর ইউনিয়নের ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবণ নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। এর আগে গত বছরে ইজিপির মাধ্যমে ওই তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজ পান রংপুরের মিলন কনস্ট্রাকশন। বরাদ্দ অনুযায়ী চন্দনপাঠ বুড়িরদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৯ টাকা, ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ৫৮ লাখ আট হাজার ২০৩ টাকা ও দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৩ টাকা।

স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। এ সব কাজের জন্য ঠিকাদারকে শতকরা ২৫ টাকা হারে প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাছে পারফরমেন্স সিকিউরিটি জমা রাখতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাজ শেষে ভবন হস্তান্তর করে এ সব পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলন করতে পারেন ঠিকাদার। তবে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে এই তিনটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই। কাজ শুরুর আগেই মিলন কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানাকে ম্যানেজ করে তিনটি বিদ্যালয়ের বিপরীতে পারফরমেন্স সিকিউরিটি ৪৬ লাখ ২৭ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। ফলে বিদ্যালয় তিনটির নতুন ভবণ নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মিলন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মিলন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর অনুমতি ছাড়া কোনভাবেই পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে, উপজেলা প্রকৌশলী পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা জমা দিয়ে কাজ শুরু করার জন্য একটি চিঠিও দিয়েছেন।

জেলার একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেন, আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রতিটি কাজের জন্য কমিশন দিতে হয়। আবার কাজ শেষ পর্যায় হলেও পারফরমেন্স সিকিউরিটি টাকা ফেরত দেন না তিনি। কিন্তু মিলন কনস্ট্রাকশনের মালিক মিলন আহমেদ এর সাথে আতাত করে সুকৌশলে কাজটি তিনি করেছেন।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা তিনটি বিদ্যালয়ের পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা উত্তোলন ও শোকজের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শোকজের জবাব উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খাঁন উপজেলা প্রকৌশলীলে শোকজের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এর দায়ভার উপজেলা প্রকৌশলী এড়াতে পারেন না। তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আরো অনেক কাজ চলমান রয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে পারফরমেন্স সিকিউরিটির টাকা কেটে নেয়া হবে। তবে সার্বিক বিষয় উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।
এই বিভাগের আরও খবর