কবে কোন রুদ্র ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে কিষাণের পড়ো পড়ো ঘর
মহামারী বন্যায় প্রাণ দিলো ক'হাজার দেহাতী মানুষ
কোন্ শস্য ক্ষেতে কবে পঙ্গপাল নিয়ে আসে ভয়াল প্রত্যুষ
যুগ যুগ আমরা তো রাখিনি খবর,
ব্যস্ত জনপদে যারা রাজনীতি, কবিতা ও কফির ধোয়ায়
নির্বাচন নিয়ে মাতি, তর্ক জমে মিছিলের সার্থকতা দূর সাহারায়
অকস্মাৎ শুনি এক দৃঢ় কণ্ঠস্বর
কোথায় মড়ক লাগে, পদ্মায় জল নেই, মুমূর্ষ বাংলার খবর
অজানা অন্ধকার গর্ভ থেকে জ্যোতির্ময় দেহ নিয়ে
উঠে আসে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদ
একটি কণ্ঠ হ'তে লাঞ্ছিত মানুষের সহস্র সংবাদ।
নতজানু স্বদেশের কানে
কী মন্ত্র দিলেন তিনি সৌম্যযোগী বৃদ্ধ ভাসানী
পল্টনে, রমনায়, টোবাটেক সিংয়ে
যৌবনের স্পর্ধায় কী অসীম দুঃসাহস নিয়ে
শতাব্দীর গ্লানি ভুলে দাঁড়ালো স্বদেশ
জীবনের জয়গানে মুখরিত বাংলা আমার।
মিছিল এগিয়ে চলে
দৃঢ় হাতে লাল ফেস্টুন
মিছিল এগিয়ে যায়
শ্লোগানে আগুন
দাউদাউ জ্বলে উঠে, পুড়ে ছাই শতাব্দির সনাতন গøানি
এ মিছিলে আগুয়ান
খেটে খাওয়া মানুষের বন্ধু ভাসানী।
ইতল বেতল ফুলের বনে, স্তব্ধ অশথ-বটের ছায়ায়, দৃষ্টি উদাস
আকাশ তলে
শব্দবিহীন ভলোবাসায় আজকে তিনি গেলেন চলে
ফসল ভরা মাঠের ধারে নিঃস্ব চাষীর ঘর পেরিয়ে
নরম কাদা বিলের পাশে পায়ে চলার পথ ছাড়িয়ে
এই যে তিনি গেলেন চলে
অস্তপারের সে পথ ভেজা শেষ বিদায়ের অশ্রæজলে।
কালো পোশাক আচ্ছাদিত নির্মম ট্রাফিক পুলিশ
হাত উঠাতেই থেমে গেল ব্যস্ত স্বদেশ
শুধু একটি মানুষ হেঁটে চললেন ভালোবাসার ফুল কুড়াতে কুড়াতে
শ্রদ্ধায় নতজানু পৃথিবীর অশ্রু ভেজালো পা শুধু
তিনি হেঁটে চললেন অন্তহীন আলোর পথ ধরে
বললেন, "তোমরা ভাল থেকো
হে আমার আত্মজেরা, হায়েনার মুখোমুখি, শ্বাপদের উদ্যত থাবায়
জীবনের দৃঢ় আশ্বাসে চিরদিন ভাল থেকো মানুষের অধিকার নিয়ে।"
ভাসানের চরে হু হু হাওয়া আজ ফেরারী বাউল
কতোদূর হ'তে বাংলায় আনে অশ্রুমেঘ
সূর্য সঙ্গ হারিয়ে পৃথিবী মৌন ম্লান
জানে রাত শেষে ফুটবে না আর একটি ফুল ।
ব্যস্ত কিষাণ শুনেছো কী চর ভাসানের মওলানা নেই
ক্লান্ত মজুর শুনেছো কী তোমার নেতা হারিয়ে গেছে
গুমরে ওঠা বুকের ব্যথা বলবে না কেউ আর কোনদিন
বিদ্রোহী সেই কণ্ঠ যে হায় স্তব্ধ হলো আজকে নিজেই।