লালমনিরহাট বার্তা
৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ‘পানিকে এখন কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়’
বার্তা ডেস্কঃ | ২২ জানু, ২০২২, ৪:৩৭ AM
৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ‘পানিকে এখন কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দেখা হয়’
বর্তমানে পানিকে কেবল সম্পদ নয়, বরং একটি কৌশলগত সম্পদ হিসাবে দেখা হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় নদী ভ‚-রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, ভ‚-রাজনীতি হল রাজনৈতিক মতামত ও জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করার একটি হাতিয়ার। একশনএইড বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত ‘তিস্তা নদী অববাহিকাঃ সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ‘৭ম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন ২০২২'-এর দ্বিতীয় দিনে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রফেসরিয়াল ফেলো শহীদুল হক একথা বলেন।
ভ‚রাজনীতিকে কেবল একক লাভের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ভ‚-রাজনীতিকে উভয়ের জন্য লাভবান দৃষ্টিতে দেখতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিষয়ভিত্তিক প্রসঙ্গ তিস্তা নদীর অববাহিকায় কাঠামোগত হস্তক্ষেপ এবং আঞ্চলিক ভ‚-রাজনীতি এবং তিস্তা নদীর অববাহিকা, বাস্তুতন্ত্র, এবং লৈঙ্গিক প্রভাব কে কেন্দ্র করে আলোচনা হয়।
নদীর উপর বাঁধ ইকো সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে উলে¬খ করে অববাহিকা ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার আহŸান জানান সম্মেলনে উপস্থিত সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।
এই সম্মেলনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও এনভায়র্নমেন্ট গভার্নড ইন্টিগ্রেটেড অর্গানাইজেশন-এর ডিরেক্টর জয়ন্ত বসু, ‘জিওপলিটিক্স অফ রিভার তিস্তা অ্যান্ড নিড টু পারসু ন্যাচারাল বেইজড নেগোশিয়েটেড এপ্রোচ (এনবিএনএ)’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
তার গবেষণাপত্র থেকে উঠে আসে, দক্ষিণ এশীয় আন্তঃদেশীয় নদীর সমস্যাগুলি আঞ্চলিক ভ‚-রাজনীতির সাথে যুক্ত কারণ এই অঞ্চলের সমস্ত দেশ প্রধানত কৃষি, জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য কারণে নদীর উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। এই অঞ্চলে অসম রাজনৈতিক ক্ষমতার উপস্থিতি; আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন ,আঞ্চলিক ভ‚-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। আন্তঃদেশীয় নদীর পানি ব্যবহারের সমন্বিত মডেল বাস্তবায়নের জন্য আন্তঃদেশীয় স্টেকহোল্ডার পর্যায়ে আলোচনার আহŸান জানান জয়ন্ত বসু।“ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে, কোনো সামগ্রিক অববাহিকা-ভিত্তিক পদ্ধতি নেই যদিও উভয় দশের মধ্য দিয়ে ৫৪ টি আন্তঃসীমান্ত নদী বয়ে গেছে। এজন্য একটি সামগ্রিক অববাহিকা-ভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন”, তিনি আরও বলেন ৷
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) এর নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, বাঁধ ও পানি ধারণ করে পানি প্রবাহ সীমিত করলে নদী ভিত্তিক মানুষের জীবন-জীবিকাকে ব্যাহত হবে। তিনি আরও বলেন পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ ভাগ্যবান যে উভয় অঞ্চলে ভাল সুশীল সমাজ সংস্থা রয়েছে যারা তিস্তা নদীর পানির মতো যে কোনও বিরোধপূর্ণ সমস্যা সমাধান করতে সহায়ক হিসাবে কাজ করতে পারে।নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ভারত বাংলাদেশের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় এই মূল্য একেবারেই হারিয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন আলোচনা প্রক্রিয়ায় প্রকৃতি-ভিত্তিক আলোচনার পদ্ধতি অনুপস্থিত। পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্টনের বিষয়ে আলোচনার প্রক্রিয়াটি জবাবদিহিমূলক এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত বলেও অভিমত দেন রিজওয়ানা হাসান। নিয়ম অনুযায়ী বছরে দুইবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন এর বৈঠিক হবার কথা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন এবং এর কোনো ফলপ্রসূ পরিণতি লক্ষ করা যায়না বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল। তিনি আরও বলেন, “গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনার মধ্যে নদী ব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে দেখা উচিত এবং এই অঞ্চলের পাঁচটি নদীপ্রধান দেশকে একসাথে বসে এই তিনটি নদীকে পরিচালনা করা উচিত কারণ এটি একক নদী ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ২৫ টি নদীর সাথে তিস্তা নদীর সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে রিভারাইন পিপল এর পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা না করে তিস্তা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবেনা। তিনি আরও বলেন প্রত্যেকটি নদীর একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছ। নদী নিয়ে যেকোন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করতে গেলে , নদী পাড়ের মানুষ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যাবস্থাপনা জরুরি।
সম্মেলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক জেরিন ইয়াসমিন চৈতি এর উপস্থাপিত গবেষণাপত্র ‘ লিভিং উইথ তিস্তা রিভারঃ উইমেনস লাইভলিহুড স্ট্র্যাটিজি ইন দ্যা চ্যাঞ্জিং ক্লাইমেট অফ দ্যা তিস্তা রিভার বেসিন’ থেকে উঠে আসে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে নদীর সাথে নারীর একটি দৃঢ় ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
অধ্যাপক জেরিন ইয়াসমিন বলেন, তিস্তা নদীর অববাহিকায় বসবাসরত নারীরা নতুন চাষ পদ্ধতি, বিকল্প জীবিকার কৌশল এবং দুর্যোগের প্রস্তুতিতে নিয়োজিত হচ্ছেন যা তাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে। তিনি আরও বলেন, নারীরা এখন আর দুর্বল ও অসহায় নয়, বরং পরিবারের জন্য নারীরা ত্রাণকর্তা হয়ে উঠেছে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। তারা এখন আয়বর্ধক কর্মকান্ড এবং অর্থ উপার্জনের সাথে জড়িত।
এছাড়াও অজয় দীক্ষিত, উপদেষ্টা, আইএসইটি -নেপাল; শরমিন্দ নিলোর্মী, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মিনকেট লেপচা, গল্পকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক; ড. মাহবুবা নাসরীন, অধ্যাপক ও পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শাহনাজ পারভিন, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
জেহরিন আহমেদ, বাংলাদেশের কমিউনিকেশনস কো-অর্ডিনেটর, ইয়ুথ এনভায়রনমেন্টাল ইনিশিয়েটিভ (বিওয়াইইআই); চায়া নামচু, পশ্চিমবঙ্গ লেপচা উন্নয়ন বোর্ডেও সাথে সংযুক্ত; মায়ালমিথ লেপচা, সাধারণ সম্পাদক; এফেক্টেড সিটিজেন অফ তিস্তা (এসিটি) তিস্তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
একশনএইড বাংলাদেশ পানি সম্পদের গুরত্ব, পানির ন্যায্যতা এবং নদীর অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।একই সাথে পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার করা, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটানো, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই ২০১৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন করে আসছে একশনএইড বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় এবছর তিস্তা নদীর অববাহিকায় বিদ্যমান সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে।(প্রেস বিজ্ঞপ্তি
)
এই বিভাগের আরও খবর