চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয়, প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরের পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু ঘুমবিজ্ঞানী ড. ক্রিস্টোফার জে. অ্যালেনের মতে, “তোমার বেশি সময় ঘুম নয়, দরকার ভালো ঘুম।”
তার ব্যাখ্যা হলো— অনেকেই সময়মতো ঘুমালেও সকালে ক্লান্ত লাগে কারণ ঘুমের মান খারাপ থাকে। অর্থাৎ ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো (light sleep, deep sleep, REM) ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না।
১. নিদ্রাহীনতা বা ঘুম–শ্বাস সমস্যা: ঘুমের সময় হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া (Sleep Apnea), শ্বাসের অনিয়ম বা নাক ডাকা ঘুমের গুণমান নষ্ট করে।
২. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম: ঘুমের আগে মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার ঘুমের চক্র ব্যাহত করে।
৩. অনিয়মিত ঘুমের সময়: প্রতিদিন ভিন্ন সময়ে ঘুমানো ও জাগা শরীরের জৈবিক ঘড়ি (circadian rhythm) নষ্ট করে।
ভালো ঘুম মানে এমন ঘুম, যা গভীর, নিরবচ্ছিন্ন এবং পুনরুদ্ধারমূলক। এই সময় শরীর কোষ মেরামত করে, স্মৃতি স্থায়ী হয়, হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং মস্তিষ্ক টক্সিন পরিষ্কার করে। তাই সময় যতই ঘুমান না কেন, এই ধাপগুলো ঠিকভাবে না হলে সকালে শক্তি আসবে না।
১. নিয়মিত সময় মেনে ঘুমানো ও জাগা: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও উঠলে শরীরের জৈবিক ঘড়ি স্থিতিশীল থাকে।
২. স্ক্রিন টাইম কমানো: ফোন বা ল্যাপটপের নীল আলো মেলাটোনিন হরমোন কমিয়ে ঘুম বিলম্বিত করে। ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন।
৩. ঘর ঠান্ডা, অন্ধকার ও নিরব রাখুন: আদর্শ ঘুমের তাপমাত্রা ১৮–২০°C। হালকা পর্দা ও আরামদায়ক বিছানা ঘুমে সহায়তা করে।
৪. ক্যাফেইন সীমিত করুন: বিকেল বা রাতে চা–কফি এড়িয়ে চলুন। ক্যাফেইন ঘুমের শত্রু।
৫. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত শরীরচর্চা ঘুমের মান উন্নত করে, তবে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে শেষ করুন।
৬. মানসিক প্রশান্তি আনুন: ঘুমের আগে হালকা বই পড়া, ধ্যান বা গভীর শ্বাস নেওয়া মনকে শান্ত করে। এতে ঘুম গভীর হয়।
৭. শান্ত ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন: শব্দ, আলো বা তাপমাত্রা যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটায়, সেটি নিশ্চিত করুন।
ভালো ঘুম মানে শুধু দীর্ঘ সময় বিছানায় থাকা নয়—এটা এমন বিশ্রাম, যা সকালে আপনাকে দেয় শক্তি, মনোযোগ আর ভালো মেজাজ। তাই এখন থেকেই অভ্যাস গড়ে তুলুন, বেশি নয়—ভালো ঘুমের।