যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নিন্দা জানিয়ে একে ‘অবান্তর’বলে অভিহিত করেছেন।
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশাপাশি একই পরোয়ানা জারি হয়েছে সাবেক ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত এমনকি হামাস নেতা ইব্রাহিম আল মাসরির বিরুদ্ধেও।
হামাসের এই নেতা মোহাম্মদ দেইফ নামেও পরিচিত। পরোয়ানা জারির আদেশে বিচারকরা বলেছেন, “নেতানিয়াহু এবং গ্যালানন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় মানুষকে অনাহারে রাখা এবং ফিলিস্তিনিদেরকে নিপীড়নের অপরাধে দায়ী, সেটি বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি আছে।”
ওদিকে, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বলেছে, তারা আইসিসি-র সিদ্ধান্তকে সম্মান করে।
এমনকি ব্রিটিশ সরকারও বলেছে, তারা আদালতের স্বাধীনতাকে সম্মান করে। তবে এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, “আইসিসি যাই বলুক না কেন, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা করা অবাঞ্ছনীয়। আমরা সবসময় ইসরায়েলের পাশে থাকব এবং দেশটির নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নেব।”
রয়টার্স লিখেছে, ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই আইসিসি-র অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গ্রেপ্তারি পরোয়ানার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আইসিসি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে গাজাবাসীকে অনাহারে রাখার অভিযোগ করেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা গাজার জনগণকে খাওয়ানোর জন্য সাত লাখ টন খাদ্য সরবরাহ করেছি। আমরা গাজার নাগরিকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টেক্সট বার্তা, ফোন কল, লিফলেট পাঠিয়েছি।”
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েল আইসিসি-র এই অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে।
গ্যালানন্ত বলেন, “আইসিসি ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং হামাসের খুনি নেতাদের একই কাতারে দাঁড় করিয়েছে। আর এতে তারা হামাস যোদ্ধাদের শিশু খুন, ধর্ষণ আর বয়স্ক মানুষদের অপহরণের বৈধতা দিয়ে দিয়েছে।
ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বিবিসি-কে বলেছেন, হামাসের সঙ্গে সংঘাত মোকাবেলায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করলেও আইসিসির সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত নন।
হামাস দেইফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কথা উল্লেখ না করলেও নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে পরোয়ানা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘নজিরবিহীন’ ঘটনা বলে অভিহিত করেছে।
গাজার ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি নেতাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
ওদিকে, ইসরায়েল গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করেছে। আইসিসি ঘোষিত গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রভাব নির্ভর করবে আদালতের ১২৪ টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনের ওপর। যদিও এই সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ইসরায়েল বা তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র অন্তর্ভুক্ত নয়।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ইতালির কর্মকর্তারা আদালতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা আল-মাসরিরর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলায় গণহারে হত্যাযজ্ঞ চালানো, ধর্ষণ এবং মানুষজনকে জিম্মি করার অভিযোগ করা হয়েছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, হামাসকে নির্মূল করতে সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
এছাড়াও, আইসিসি-র প্রি-ট্রায়াল চেম্বার দেইফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছে। তবে ইসরায়েল দাবি করেছিল, জুলাই মাসে গাজার একটি বিমান হামলায় দেইফ নিহত হয়েছেন। যদিও হামাস এখনও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
দেইফ মানবতাবিরোধী অপরাধ যেমন গণহত্যা; অত্যাচার; এবং ধর্ষণ এবং অন্যান্য ধরনের যৌন সহিংসতা; জিম্মি করা; ব্যক্তিগত মর্যাদার উপর আঘাতসহ এমন নানান যুদ্ধাপরাধের যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি পাওয়া গেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো 'ইসরায়েলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর পরিচালিত বিস্তৃত ও নিয়মতান্ত্রিক হামলার অংশ' বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।