বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

ধর্ষণ: এর শেষ কোথায়?


প্রকাশ :

হিন্দু, মুসলিম বিভাজনে দেশ ভাগ হয়েছে ৪৭শে। যার যার মতে এ নীতির বলি হয়েছে, শহিদ হয়েছে লাখো প্রাণ। ৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মুসলিম সৈন্যরা পশ্চিম পাকিস্তানের হিন্দু, মুসলিম উভয় ধর্মের লাখ লাখ নারীকে ধর্ষণ করে উল্লাস করেছে, ইতিহাস তাই বলে। হিন্দুদের দ্বারা ভারতে অসংখ্য মুসলিম নারী ধর্ষিত হচ্ছে এখনো, বাংলাদেশেও মুসলিম দ্বারা হিন্দু নারীরা।

সবখানে আইন ইশারায় চলে নীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে। ধর্ষণের কিছু খবর যেমন ভাইরাল হয়, তোলপাড় তোলে, তেমনি কিছু ধর্ষণের খবর চাপা পড়ে যায় নিয়তির হাত ধরে। এ নিয়তি লেখার দায়িত্ব আসমানী বিধির হাতে নয়, এ দায়িত্ব পালন করেন মর্তের ঈশ্বর।

ধর্ষিতার পরিচয় শুধু "নারী" নয়, প্রকাশ পায় "হিন্দু নারী" বা "মুসলিম নারী" পরিচয়ে। ফলে সে নারীর ইজ্জতের অপমানের চেয়ে বেশি অপমান মেখে নেয় "হিন্দু" বা "মুসলিমান" শব্দগুলো সাম্প্রদায়িক মানসিকতায়। ফুঁসে ওঠে সম্প্রদায়, শুরু হয় দাংগা, রক্ত ঝড়ে জীবনের বিনিময়ে, ভাঙা পড়ে মসজিদ-মন্দির, আগুনে পোড়ে বসতবাড়ী, পক্ষ নেয় খবরের পাতা, ফায়দা লোটে রাজনীতিজীবি, আইন-শৃঙ্খলার রক্ষক।

বিচার চলে। কূট প্রশ্নের পর প্রশ্নে কাঠগড়ায় পুনরায় ধর্ষিত হয় "নারী" উন্মুক্ত ট্রাইব্যুনালে। পরীক্ষার নামে আবার ধর্ষণ করে বিশেষজ্ঞ আঙ্গুল। উকিলের পকেট ভারি হয়, সাথে কোর্ট কর্মচারী। ফাইলের পর ফাইলের স্তূপে ডুবে যাওয়া বিচারক তারিখের পর তারিখ লিখে হাফ ছেড়ে বাঁচতে চান কখনো।

একজন "নারী" ধর্ষণের পর এই যে ঘটনার প্রবাহ, এর কী পরিবর্তন আসবে? বিচার-ই কী শেষ সমাধান? যাবজ্জীবন বা প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড?

এতে শিকার "নারী" কী তার সম্মান ফিরে পাবে?আমরা কী তার দিকে আঙ্গুল তুলবোনা এরপর?

শিকার জেনেও ক'জন স্বামী বা শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা তাকে সম্মানের চোখে দেখবে, পূর্বেরমতো স্বাভাবিক আচরণ করবে ঐ নারীর সাথে?

এমন ক'জন উদার যুবক রয়েছেন যারা সব জেনে এমন নারীকে স্বাভাবিক বিয়ে করবেন?

কতজন বাবা-মা আছেন যারা একজন ধর্ষিতাকে তাদের ছেলের বউ করে আনন্দে ঘরে তুলে নেবেন?

যে নারী আজ আবদ্ধ ঘরে থেকেও ধর্ষিত হলো, যে মেয়ে শিশুটি নারী হয়ে ওঠার আগেই ধর্ষিত হলো, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া যে নারী তার সম্ভ্রম হারালো সেখানে ধর্মনীতি কতটুকু প্রযোজ্য, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা জরুরি। ধর্মীয় শিক্ষালয় মাদ্রাসায় যে পুরুষ শিশুটি বলাৎকার হলো সেখানে কী কারণ? কিংবা মন্দিরে, কোনো উপাসনালয়ে?


"ধর্ষক" একজন পুরুষ।

একজন সামাজিক দুর্বল পুরুষ কী ধর্ষক হন? তা সহজ নয়। "ধর্ষক" সহজে হয়ে ওঠেন একজন পাওয়ারফুল পুরুষ যিনি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাতে সাহস রেখেছেন, রাখেন আইন নিয়ন্ত্রকের ভড়সায়। অপর নিয়ন্ত্রক তখন খেলতে শুরু করে সুশীল বেশে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, জনতার সুনজর প্রত্যাশায়। একসময় খেলা শেষ হয় অন্য খেলার উদ্যোগে। কিন্তু সেই ধর্ষিতা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বয়ে বেড়ান সে ক্ষত, যা শুকাবার আগেই সমাজ নামের আমি, আপনি পুনরায় তাকে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করি। এতে লাভ কী?

লাভ-ক্ষতির হিসেব এভাবেই চলছে অনন্তকাল ধরে।

এভাবেই হিসেব মিলিয়ে চলছি আমরা প্রতিক্ষণ,

এভাবেই হিসেব মিলে যায় অমীমাংসিতভাবে,

কেউ কী বলতে পারবো এর শেষ কোথায়?

লেখক:-সাংস্কৃতিক সংগঠক,

মোবাইল: ০১৭১৭৭৪৩৪৮৯

ইমেইল: [email protected]