ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা উপলক্ষে হাজার প্রাণের মেলা বসেছিল রংপুরের গঙ্গাচড়ায়। তীব্র শীত এবং প্রচন্ড কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ উপেক্ষা করে নানা বয়সি হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুগ্ধ হয়ে উঠে বোতলার দোলা। অংশগ্রহনকারী এবং দর্শর্নার্থীরা জানালেন , ১৬ বছর পর খোলামেলা ভয়হীনভাবে বাংলার ঐতিহ্যবাহি এই খেলাধুলা আয়োজন তরুণ প্রজন্মকে মাদক এবং সকল ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
গঙ্গাচড়ার গজঘন্টা ইউনিয়নের বোতলার দোলা। বুধবার ( ১ জানুয়ারী) দিনভর হাজার হাজার নানা বয়সি ও শ্রেণি পেশার মানুষের মুগ্ধ পদচারণায়। উপলক্ষ ঘোড় দৌড়। বাঁধা হয়ে দাড়াতে পারেনি তীব্র শীত আর শীরশীর বাতাস। আয়োজক স্থানীয় রমাকান্ত গাউছিয়া বাজার যুব সংঘ। যখন ঘোড়া দৌড় শুরু করে তখন জনতার উচ্ছাসে প্রকম্পিত সেখানকার আকাশ বাতাস। রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জড়ো হয়েছিলেন তারা।
দর্শনার্থীরা জানালেন, এ ধরণের উদ্যোগ আগে দেখা যায় নি। অনেক আগের এই খেলা ফিরে আসায় খুশি তারা।
ঘোড়া দৌড় দেখতে আসা মিঠাপুকুরের কেশবপুর এলাকার শিক্ষার্থীর ফয়সাল শিহাব জানালেন, কখনই এই ধরণের উদ্যোগ আমি দেখিনি। ঘোড়া দৌড় ইউটিউবে দেখেছি। এবার বছরের নতুন দিনে ঘোড়া দৌড় দেখতে এসে ভালো লাগলো। আমাদের দেশের যে এতো ঐতিহ্যবাহী খেলা আছে সেটা না দেখলে বুঝতাম না।
গঙ্গাচড়ার আলমবিদিতর ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আকতারুল ইসলাম জানালেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং ইন্টারনেটে বুদ হয়ে আছে। এখানে এসে দেখলাম অনেক তরুণ এসেছে। তারা খুবই মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে। গ্রাম বাংলার এধরণের ঐতিহ্য খেলা গুলোকে তুলে ধরে তরুণ প্রজন্মকে জানিয়ে দিতে হবে খেলা গুলো। তাহলে মাদকমুক্ত তরণ প্রজন্ম গড়ে উঠবে।
বয়োবৃদ্ধ আকমল হোসেনও (৭৬) এসেছেন হারাগাছ পোদ্দারপাড়া থেকে খেলা দেখতে। চাদর মুড়িয়ে এসেছেন তিনি। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। জানালেন, ছোটবেলায় হতো এধরণের খেলা হতো। আমরা খুব আগ্রহ ভরে খেলা দেখতাম। কিন্তু গত ৬০ বছরেও এ ধরণের খেলা হয় নি। সেজন্য শীত আর বাতাস উপেক্ষা করেই খেলা দেখতে এসেছি। লোভ সামলাতে পারিনি। এখানে এসে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেলো। অনেক মানুষ এসেছেন এখানে। সেটাও ভালো লাগলো। এভাবে খেলাধুলা দিয়ে আমাদরে তরুণপ্রজন্মকে বুদ করে রাখতে হবে।
মেলা প্রাঙ্গনে বসেছে বিভিন্ন খাবারের দোকানও। একদিনেই বড় আয় হয়েছে তাদের। ভ্রাম্যমান নাস্তার দোকানী রেদওয়ান মিয়া জানালেন, আমাদের এলাকায় প্রথম এধরণের খেলা হচ্ছে। অনেক মানুষ এসেছে। বেচাবিক্রিও ভালো করলাম। বহুদিন পর উম্মুক্ত পরিবেশে এত মানুষ আনন্দ করলো। দেখেই ভালো লাগলো।
মেলায় এসেছিলেন অসংখ্য নারী। আলেমা খাতুন নামের এক মধ্যবয়সি নারী জানালেন, গত প্রায় ১৬ বছর আমরা একসাথে এধরণের আনন্দ উপভোগ করতে পারিনি। ওই সময়ে এধরণের কোন আয়োজনও হয়নি গ্রামেগঞ্জে। ঘোড়ার দৌড় খেলা দেখতে এসে এতো মানুষ দেখে আমি খুবই আনন্দিত।
আয়োজক যুব সংঘের সমন্বয়ক স্থানীয় গাউছিয়া বাজারের ব্যবসায়ি ওবায়দুর রহমান জানান, আমরা সাকসেস হয়েছি। কারণ এতো মানুষ এসেছিল আমরা আশা করিনি। প্রায় ১৫/১৬ বছর পর মানুষ কোন বাঁধা-ভয়হীনভাবে খেলা দেখতে এসেছিলেন। আমরা খুশি। সবাই আনন্দ করতে পেরেছেন এটা আমাদের পাওয়া। আমাদের আরও ৬টি স্থাণীয় খেলা ছিল। সেটা করতে পারিনি। কারণ প্রচন্ড শীত, কুয়াশা আর বাতাস ছিল। সেকারণে মানুষ আসতে একটু দেরি করেছে।
আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুল হাসান মৃধা। তিনি জানালেন, এতো মানুষ। দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। সব বয়সি মানুষ এসেছিলে। যার অর্ধেকেই নারী। আমি মনে করি এটা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর একটি মিলনমেলা। এর মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম মাদক এবং জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসবে। পাশাপাশি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষা হবে। এ ধরণের ঐতিহ্যাবাহি খেলাকে পৃষ্ঠপোষকাত করতে উপজেলা প্রশাসন সব সময় আয়োজকদের পাশে থাকবে।মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মানে এ ধরণের উদ্যোগ আশা জাগানিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলের ২২ টি দল। অশ্বারোহীদের অধিকাংশই কিশোররা। নানা জায়গায় খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাদের ।
প্রতিযোগিতায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের মেরাজুলের বাহাদুর রংপুরের বদরগঞ্জের মোকাদ্দেস আলীর আগুন পাখি ঘোড়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।