শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ সারাদেশ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নিকট ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের স্বারকলিপি পেশ


প্রকাশ :

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক এর নিকট বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী পরিষদ' ৭১ এর ৯ দফা দাবী বাস্তবায়নে স্বারকলিপি পেশ করা হয়।

এ সময় বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী পরিষদ' ৭১ আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড.ইদ্রিস আলী, সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, যুগ্ম আহবায়ক মোজাফফর আহমেদ, নির্বাহী সদস্য সিরাজুল ইসলাম, ও আব্দুস সামাদ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা যাতে মর্যাদা পায় সেই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। বিভিন্ন সংগঠনের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিরা ১৯৭২ সালের গেজেটে উল্লেখিত সংজ্ঞা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও নব গঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ( জামুকা) কাজ করছে। ইতোমধ্যে জামুকা পুনর্গাঠিত করা হয়েছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিতকরণের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে অভিযোগ ফর্ম দেওয়া আছে। যে কোনো ব্যক্তি উক্ত ফরম ডাউনলোড করে অভিযোগ করতে পারবেন । অভিযোগ পেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী,সরকারি দপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, অতীতের ন্যায় আগামীতে কেউ যেন মুক্তিযোদ্ধার নামে ব্যবসা করতে না পারে, সেজন্য মন্ত্রণালয় সজাগ রয়েছে। হাসপাতালগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও বিগত সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা সঠিক চিকিৎসাসেবা পাইনি। মুক্তিযোদ্ধার কল্যাণ ট্রাস্টের সম্পত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসাসেবা পাবেন। সেই সাথে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। ।

৯ দফা দাবি সমূহ নিচে দেওয়া হল :

১।বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও  নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংস্কার জাতীয়  কমিটি গঠন।

২।বীর মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। অথচ রক্তস্নাত বাংলাদেশের সংবিধানে ”মুক্তিযুদ্ধ”  ও ”বীর মুক্তিযোদ্ধা” শব্দ দুটির উল্লেখ নেই। তাই "মুক্তিযুদ্ধ" ও " বীরমুক্তিযোদ্ধা" শব্দ দুটি সাংবিধানে সন্নিবেশিত  করে স্বীকৃতি প্রদানের দাবী জানানো যাচ্ছে।

  ৩।মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত  ছাত্র- জনতার অংশগ্রহণে  ফ্রিডম ফাইটার (এফ,এফ)। সেনা, বাহিনী,বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ,আনসার, মোজাহিদদের সমন্বয়ে মিলিটারী ফোর্স  ( এম,এফ) ও বিভিন্ন বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পৃথক পৃথক ভাবে প্রকাশ করার জোর দাবি জানানো যাচ্ছে।

৪।রাজনীতি করণ দলীয়করণ,আত্মীয়করণ ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কর্তৃক  প্রণয়নকৃত ৩৩ ধরনের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বাতিলের দাবী জানানো যাচ্ছে।

৫।দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের চাকরি দেওয়া হয়েছে। এরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিনা কিনা তা জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরিচূৎসহ আইনানুগ অবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো যাচ্ছে।।

৬। বর্তমানে ১ লাখের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ এবং অধিক সংখ্যক ভুয়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দ্বিগুণ ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে। যারা পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন তাদের মধ্যে কতজন যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহত হয়ে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তারো সংখ্যা প্রকাশ করতে হবে। এতে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ ও অপচয় হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানানো যাচ্ছে।

৭। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের পুনর্বাসনে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, সর্বোপরি সরকারি বেসরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোঠা নির্ধারণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানানো যাচ্ছে।

৮। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদা প্রদান সহ জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান। সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল সমুহে এবং বিদেশে সরকারি ব্যয়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরন। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সমূহে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মর্যাদা প্রদান দাবি জানানো যাচ্ছে।

৯।১৯৭২ সালে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্টের সম্পদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ। সারা বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে, বাড়ি ফ্ল্যাট, প্লট বরাদ্দ হয়েছে তার বিবরনী প্রকাশ। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা বর্ধিত চাকুরী করেছেন তার তালিকা প্রকাশ। কারন বহুভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বর্ধিত সরকারী চাকুরির সুবিধা নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো যাচ্ছে।