রংপুরে মামলার জটিলতায় প্রায় ১৪ বছর ধরে ১ হাজার ৫০০ টন ইউরিয়া সার গুদামের বাইরে পড়ে রয়েছে। গুদামের জায়গা দখল করে রেখেছে।জায়গা সংকটে সার সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছেন বি.সি.আইসি.বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ।সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ করর্পোরেশনের (বিসিআইসি) ভাড়া করা গুদামের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার টন।বর্তমানে সাড়ে ১০ হাজার টন সার মজুত করেছে।
জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এখন অধিকাংশ সময় অতিরিক্ত সার খোলা স্থানে স্তুপ করে রাখছে কর্তৃপক্ষ। যদিও সারের ওপর পলিথিন মোড়ানো থাকে। তবে কুয়াশা-ও সূর্যের তাপে সার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে সবসময়।
বিসিআইসির বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ বলছে, মামলা জটিলতায় প্রায় ১৪ বছর ধরে ১ হাজার ৫০০ টন ইউরিয়া সার গুদামের বাইরে পড়ে রয়েছে, যা গুদামের জায়গা দখল করে রেখেছে। কৃষি কাজে সারের গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মামলার দীর্ঘ সূত্রতা দূর করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ভর্তুকি মূল্যে আনা সারের যথাযথ ব্যবস্থাপনা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি গুদামে সার সংরক্ষণ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
রংপুরের বিসিআইসির বাফার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-২০১৪ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের নূর ট্রেডিংয়ের সরবরাহ করা ১ হাজার ৫৫০ টন ইউরিয়া সারে ক্রুটি ধরা পড়ে। সে সময় কর্তৃপক্ষ সারগুলো কৃষক পর্যায় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।বিষয়টি সমাধানে একাধিকবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হলেও কোনো সমাধান হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সারগুলো গুদামে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।২০২২ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শক্ত, জমাট বাঁধা সার বাদে বাকিগুলো নতুন বস্তায় ভর্তি করা হয়।এ সময় প্রকৃত ইউরিয়া সার পাওয়া যায় ১ হাজার ৯৯ দশমিক ৮৫ টন। মামলা চলমান থাকায় আলামত হিসেবে সারগুলো সংরক্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছে গুদাম কর্তৃপক্ষ।
রংপুরের বিসিআইসির বাফার গুদাম ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ও ইনচার্জ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, তৎকালীন ইনচার্জ মুকুল মিয়া দায়িত্বে থাকার সময় এ ঘটনা ঘটে। মামলার আলামত হিসেবে এটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সারের বস্তা গুলো ছেঁড়া, ফাটা এবং কম ওজন সহ বিভিন্ন ক্রুটি রয়েছে।গুদামে জায়গা না হওয়ায় বাইরে সার রাখতে হচ্ছে। নগরীর দর্শনায় ২০ হাজার টন সার ধারণ ক্ষমতার একটি গুদামের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।গুদামটি নির্মিত হলে সার রাখার জন্য আর সমস্যা হবে না।গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৫ হাজার টন। বর্তমানে সেখানে সার রয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টন। বছরের নভেম্বর-মার্চ পাঁচ মাস হচ্ছে পিক সিজন। এ সময় জেলায় আলু, ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদের জন্য ইউরিয়া সারের চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন।অফ সিজনে আপৎকালীন মজুদের জন্য ইউরিয়া সার বেশি করে আনা হয় গুদামে। বাধ্য হয়ে সার গুদামের বাইরে ইট বিছিয়ে ফাঁকা জায়গায় রাখতে হচ্ছে।
জানাযায়,রংপুর জেলায় বছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টন, যা বিসিআইসির নির্ধারিত ১০৬ ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের কাছে সরবরাহ করা হয়। গুদাম পরিচালনায় যে লোকবল রয়েছে, তাদের দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ টন সার সরবরাহ করা সম্ভব।বরাদ্দ প্রাপ্ত ডিলাররা সময়মতো উত্তোলন না করায় অনেক সময় গুদামে সার পড়ে থাকে।সরকারি গুদামের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত ও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার স্বার্থে সার সংরক্ষণে আরো কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।