শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ মতামত

দায় কার ? রাজনৈতিক মামলা আর অর্থনৈতিক ক্ষতি


প্রকাশ :

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মামলায় অর্থনীতির প্রভাব সম্বন্ধে আপনার কোন ধারণা আছে কি?:-

বাংলাদেশে এ যাবৎ কাল পর্যন্ত যত বার বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে।পরিবর্তিত সরকার ব্যবস্থায় পূর্ববর্তী সরকারের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিপক্ষে পরবর্তী সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত পরিমাণে মামলা মোকদ্দমা দায়ের হয়ে আসছে। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিটি একটি ট্রেডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কিছু মামলা সত্য ঘটনার পক্ষে আর কিছু ঘটনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দায়ের হয়ে আসছে। মামলা দাঁয়ের করার সময় প্রকৃত অপরাধী ছাড়াও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন বা হয়রানি করার লক্ষ্যে নির্দিষ্ট অপরাধী ছাড়াও অজ্ঞাতনামা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী লোকজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। মামলায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিগণের তালিকা লম্বা হয়ে থাকে এবং এই তালিকাটিই প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করে অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেনের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও এই মামলা সমূহের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সরকারের অন্যায় কারীদের বিরুদ্ধে যেমন শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়,তেমনি তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবেও দুর্বল করে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয়।। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট পাঁচ জন ব্যক্তি বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক যেভাবেই হোক ক্ষমতা দখল করে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেছিল। প্রতিটি সরকারই তার পূর্ববর্তী সরকারের কর্মীদের উপর লক্ষাধিক করে মামলা দায়ের করেছিল বলে দেখা যায়।

বাংলাদেশে মামলা পরিচালনায় কোন কোন কর্তৃপক্ষ জড়িত থাকে:-

বাংলাদেশে মামলা পরিচালনার জন্য কয়েকটি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে থাকে। এখানে মূল কর্তৃপক্ষের কিছু বর্ননা তুলে ধরা হলো।

১. বিচার বিভাগ :

  • বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট**: আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।
  • জেলা আদালত**: জেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করে।

২.আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়:

  • আইনী সংস্কার, নীতি প্রণয়ন এবং ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে থাকে।

৩.লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ:

  • যাদের সামর্থ্য নেই তাদের আইনি সহায়তা প্রদান করে, প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য কেস ম্যানেজমেন্ট সহজতর করে থাকে।

৪. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল:

  • বাংলাদেশে আইনী পেশাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।আইনজীবী নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে তাদের সনদ দেওয়ার কাজ এবং আইনজীবীদের মধ্যে নৈতিক অনুশীলন নিশ্চিত করার কাজ করে থাকে।

৫.পুলিশ:

  • ফৌজদারি মামলায়, পুলিশ প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে প্রসিকিউশন পর্যন্ত মামলার তদন্ত এবং পরিচালনার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে।

৬.দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক):

  • দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত মামলা পরিচালনায় নিয়োজিত থাকে।

৭.সমাজ পরিষেবা বিভাগ:

  • সামাজিক কল্যাণ সম্পর্কিত কেস ম্যানেজমেন্টে ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে দুর্বল জনসংখ্যাকে সহোযোগিতা করার কাজে জড়িত থাকে

৮.জেলা কমিশনার (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও):

  • স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক মামলা পরিচালনায় জড়িত থাকে।বিশেষ করে জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং সম্প্রদায়ের সমস্যায় নিরসনে কাজ করে থাকে।

এই কর্তৃপক্ষগুলির প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে, যা তাদের এখতিয়ারের মধ্যে সামগ্রিক কেস ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে।


জেলা জজ কোর্টে বিচার পরিচালনার জন্য কর্তৃপক্ষ কারা কারা?:-

একটি জেলা জজ আদালতে, বিচার পরিচালনার জন্য নিম্ন বর্ণিত কর্তৃপক্ষ সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে:-

১.জেলা জজ:

  • বিচারের সভাপতিত্ব করার জন্য দায়ী প্রাথমিক কর্তৃপক্ষ।আইনের বিষয়গুলির উপর রায় প্রণয়ন এবং পদ্ধতিগুলি অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য তিনি কাজ করে থাকেন।

২.কোর্ট ক্লার্ক বা পেশকার:

  • বিচারককে আদালতের রেকর্ড এবং ডকুমেন্টেশন পরিচালনায় সহায়তা করে এবং বিচার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে সাহায্য করে থাকে।

৩.কোর্ট দারোগা:

  • আদালতের কক্ষে শৃঙ্খলা বজায় রাখে, কোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং বিচার প্রশাসনে সহায়তা করে।

৪.প্রসিকিউটর বা সরকারি উকিল পিপি:

  • ফৌজদারি মামলায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করে।

৫.ডিফেন্স অ্যাটর্নি বা উকিল ও তার মোহরী:

  • অভিযুক্তদের প্রতিনিধিত্ব করে, বিচারের সময় তাদের অধিকার যাতে সমুন্নত থাকে তা নিশ্চিত করে।

৬.জুরি বোর্ড :

  • বিচার প্রার্থীদের পক্ষে একটি দল যারা প্রমাণ উপস্থাপিত করেন এবং বাস্তবসম্মত রায়ে পৌঁছানোর জন্য সহোযোগিতা করেন।

৭. থানা পুলিশ:

  • ফৌজদারি মামলায়, মামলা নথিবদ্ধ করা,জিডি গ্রহণ করা আসামি ধরা,ওয়ারেন তামিল করা সহ অসংখ্য কাজে স্থানীয় থানা পুলিশ সরাসরি জড়িত থাকে। অর্থাৎ পুলিশ প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে প্রসিকিউশন পর্যন্ত মামলার তদন্ত এবং পরিচালনার সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করে।

৮. গোয়েন্দা সবসময় সমূহ:

  • অনেক ক্ষেত্রে মামলা সমূহ পরিচালনা করার জন্য তদন্ত রিপোর্টের প্রয়োজন হয়ে থাকে।এই তদন্ত রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকেন।এক্ষেত্রে মামলায় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যবৃন্দ জড়িত থাকে এবং তাদেরও এই কাজ করতে হয়।

বেসরকারিভাবে আরও কয়েকটি কর্তৃপক্ষ মামলা পরিচালনায় যুক্ত থাকে যেমন:-

১)থানায় মামলা করার জন্য থানার মুন্সি এবং থানার দালাল, যারা মামলার বাদী-বিবাদীর উভয়ের পক্ষেই থানায় তদবির করে থাকে এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেনের নেগোশিয়েশনের কাজ করে থাকে।


২) স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার বা ইউনিয়ন কাউন্সিল,উপজেলা পরিষদ মামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে।


বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাজনৈতিক মামলার দায় বোঝার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:-

দেশের আদালতগুলোতে মামলাজট প্রসঙ্গে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উন্নত দেশগুলোতে অধিকাংশ মামলা আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিচারের আগেই নিষ্পত্তি হয়। যার ফলে শেষ পর্যন্ত মামলা বিচারের জন্য কম যায়।সে কারণে মামলাজটটাও কম থাকে আর আমাদের দেশে প্রায় সব মামলাই বিচারের জন্য আদালতে যায়। প্রতিটি মামলায় সাক্ষ্য হয়, প্রমাণ হয়- এসব করতে সময় লাগে। একজন বিচারকের কাছে ২০টা, ২৫টা, ৫০টা কিংবা ১০০টা মামলা থাকে। তখন নিষ্পত্তি করতে সময় লাগে।এক-এগারোসহ পরবর্তী সময়ে বিএনপি দলটির দাবি, গত ১৫ বছরে প্রায় দেড় লাখ মামলায় আসামি হয়েছেন ৫০ লাখেরও বেশি। জামিন ও হাজিরা নিয়ে আদালতপাড়ায় নিয়মিতই দৌড়াচ্ছেন তারা। বিভিন্ন মামলায় সাজা হয়েছে দেড় হাজারের মতো নেতাকর্মীর।হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি(এইচআরএসএস) জানিয়েছে, নভেম্বর/২৩ মাসে বিএনপি ও জামায়াতের ২ হাজার ৯০ নেতাকর্মীসহ মোট ২ হাজার ১১৬ জন রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নিজস্ব তদন্ত ইউনিটের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সংস্থাটি এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে।একই সময়ে, ৩ হাজার ৫৬৪ বিরোধী নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আরও ৯ হাজার ৬৬৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মোট ১১২টি মামলা হয়েছে।আজ শনিবার এক প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এসব তথ্য জানায়।তারা আরও দেখেছে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনের ঘটনায় কমপক্ষে ৬২টি মামলায় ২০০ জনেরও বেশি শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩৪ হাজারের বেশি জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

টানা ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের মাথার ওপর ঝুলছে লাখো মামলার খড়গ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের তিন মাসে কেবল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৩৪টি মামলা হয়েছে।বিএনপির হিসাবে, গত বছরের ২৮ জুলাই/২৩ থেকে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি/২৪ পর্যন্ত এক হাজার ১৮২টি মামলায় দলের মোট ২৭ হাজার ৫০৭ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি এক লাখের ওপর নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।আর ২০০৯ সাল থেকে ২৫ জুলাই/২৩ পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা রয়েছে। আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে।

মামলার অর্থনৈতিক ব্যয়ের পর্যালোচনা:-

একটি মামলা দায়ের করা থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যন্ত রায় সম্পাদন করার জন্য প্রায় ১৬টি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা দরকার হয়ে থাকে। থানার দালাল থেকে শুরু পরে সুপ্রিম কোর্টের এপিলেট ডিভিশন পর্যন্ত এই ১৬ কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা এবং পরিশ্রম দরকার হয়ে থাকে।

কোর্টে মামলা করতে কত টাকা লাগে?

বাংলাদেশে কোর্টে মামলা করতে কোন নির্ধারিত ফি নেই। মামলা দায়েরের জন্য যে খরচ হয় তা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন:

১. মামলার ধরন: দেওয়ানী, ফৌজদারী বা অন্য কোন ধরনের মামলা কিনা তার উপর ভিত্তি করে খরচের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।

২. আইনজীবির ফি: আইনজীবি বা অ্যাডভোকেটের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং নামের ভিত্তিতে তাদের ফি পরিবর্তিত হয়।

৩. মক্কেলের সামর্থ: মক্কেল বা ক্লায়েন্টের আর্থিক সামর্থ এবং প্রতিপত্তি মামলার খরচ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. মোকাদ্দমার মূল্যমান: মামলায় যা নিয়ে দাবি করা হচ্ছে তার আর্থিক মূল্য বা গুরুত্ব অনুযায়ী ফি নির্ধারিত হতে পারে।

৫. পরিশ্রমের পরিমাণ: মামলা পরিচালনায় যে পরিমাণ পরিশ্রম, সময় ও শ্রম ব্যয় হয় তার উপর ভিত্তি করে খরচের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।

৬. অতিরিক্ত খরচ: কোর্ট ফি, নোটারি চার্জ, ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি, এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ মামলার খরচে যুক্ত হয়।

এসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে মামলা করার মোট খরচ নির্ধারিত হয়। তাই, মামলার খরচ একেক ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে এবং এটি নির্দিষ্ট নিয়ম বা ফি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। মামলায় দুই ধরনের খরচ হয়ে থাকে একটি রাষ্ট্রীয় খরচ আর একটি হলো বাদী বিবাদীর ব্যক্তিগত খরচ।

পুলিশ বা রাষ্ট্রের খরচ হল- ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলার খরচ হবে = ১,৩৮,০৭১,/@৫০০/=৬,৯০,৩৫,৫০০/= ( ছয় কোটি নব্বই লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার পাঁচশত টাকা মাত্র)।


আসামি পক্ষের খরচ তাদের ব্যক্তিগত খরচ।তাদের খরচের পরিমাণ কি পরিমাণ হবে:-

মোট আসামির সংখ্যা ৪০ লাখ ধরে নিম্নে ব্যয়ের একটি আনুমানিক হিসাব বিবরণী তুলে ধরা হল:-

১/ প্রতি আসামীর উকিল ধরার খরচ :-প্রতিজন আসাহ উকিলের ফি বাবদ যদি ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে থাকে তাহলে উকিল বাবদ মোট খরচ হবে:- ৪০,০০,০০০/@৫০০০/=২০,০০,০০,০০,০০০/=( দুই হাজার কোটি টাকা)

২/ হাজিরা ফি প্রতি আসামীকে যদি বছরে ছয়বার কোর্টে হাজিরা দিতে হয় ।প্রতি হাজিরায় যদি ২০০০/ টাকা করে খরচ হয় তাহলে ১৬ বছরে মোট খরচ হবে:-২০০০@৪০,০০,০০০@৬ বার@ ১৬ বছর=৭৬৮,০০,০০,০০,০০০/

(সাত হাজার ছয়শত আশি কোটি টাকা মাত্র)

৩/জেলখানা খরচ:-প্রতি আসামির জন্য দৈনিক খাবার হিসেবে জেলখানায় যে টাকা খরচ করা হয় তার পরিমাণ যদি দৈনিক জনপ্রতি ২০০/ ধরা হয় তাহলে:- বছরে মাত্র পঞ্চাশ হাজার আসামির জন্য খাওয়া খরচ লাগবে-৫০,০০০জন আসামি @ ২০০/টাকা *৩৬৫দিন=৩৬৫,০০,০০,০০০/

(তিনশত পয়ষটি কোটি টাকা মাত্র)

১৬ বছরে মোটা খরচ হবে ৩৬৫,০০,০০,০০০*১৬ বছর= ৫৮৪০,০০,০০,০০০/= (পাঁচ হাজার আট শত চল্লিশ কোটি টাকা মাত্র)

৪/ মামলার ভয়ে আসামি পক্ষের খরচ:-

বাংলাদেশে রাজনৈতিক মামলা সমুহ সাধারণত অনুমান ভিত্তিক অথবা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়,বিধায় একই ব্যক্তি বিভিন্ন মামলায় তালিকাভূক্ত হন।কারণ মামলা দায়ের করার জন্য কর্তৃপক্ষ তথা পুলিশ সহ অন্যান্য সংস্থার লোকসমূহ কষ্ট করে প্রকৃত অপরাধী খোঁজার চেয়ে তাদের হাতে বিদ্যমান তালিকাকেই প্রতিটি মামলায় সংযুক্ত করে দিয়ে তাদের শ্রম কে হ্রাস করে থাকে। অপরপক্ষে অন্যায় না করেও একই ব্যক্তি অসংখ্য মামলায় তালিকাভূক্ত হয়ে হয়রানির মধ্যে যুক্ত হয়ে পড়ে। হয়রানি মূলক এই সমস্ত মামলার ভয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং তাদের দালাল চক্র আসামীর পক্ষ থেকে যেকোনোভাবেই হোক অর্থ চাঁদা হিসেবে,খরচ হিসেবে বা ঘুষ হিসেবে গ্রহন করে থাকে। এর প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন, তবে আমরা অনুমান ভিত্তিক একটি হিসাব দ্বার করাতে পারি।যদি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা আওতায় ৪০ লাখের উপরের আসামি গত সরকারের সময়ই হয়ে থাকে,তাহলে তারজন্যে কি পরিমাণ ঘুস লেন দেন হয়েছে তার আনুমানিক অংক হলো:-

৪০,০০,০০০ আসামী * প্রতি আসামির কাছ থেকে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করলে মোট ঘুষের পরিমাণ হবে ৪০,০০,০০০ * ৫০০০/ টাকা=২০,০০,০০,০০,০০০/ (দুইশত কোটি টাকা) মিনিমাম বা কমপক্ষে এই পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের বা আসামি ধরার কর্তৃপক্ষ পকেটস্থ হয়েছে।


৫/মামলা ব্যবস্থাপনা খরচ:- মামলার আসামি ধরা, ওয়ারেন্ট ইস্যু করা,জামিন নেওয়া, আসামি নিয়ে যাওয়া আসাসহ যাবতীয় ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশাল অংশের অর্থ দৈনন্দিন ভাবে ব্যয় করতে হয়।এই ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হলে পুলিশ এবং আদালত ডিপার্টমেন্টের নামে বার্ষিক বাজেটের অংশ থেকে খরচ বের করতে হবে।কিন্তু বিশাল অংকের খরচ হয় একথা নিশ্চিত বলা যায়।


৬/রাজনৈতিক প্রতি হিংসায় যে সমস্ত মামলা করা হয়। সেই সমস্ত মামলার মধ্যে প্রকৃত অপরাধির সংখ্যা খুবই সামান্য। অবশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রতিহিংসার বা রাজনৈতিক হিংসার কারণে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। তারা জীবনের অনেক কর্ম ঘন্টা কোর্টের বারান্দায় ঘুরে নষ্ট করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা থেকে বঞ্চিত হয়। যার অর্থনৈতিক মূল্য অনেক বেশি। যেমন যানজটে পরে শহরের রাস্তাগুলোতে হাজার হাজার মানুষের কর্ম ঘন্টা নষ্ট হয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়,তেমনি রাজনৈতিক প্রতি হিংসায় পড়ে মানুষের জীবন থেকে অসংখ্য কর্ম ঘন্টা অযথাই চলে যায়।যার আর্থিক মূল্য হিসাব করে বের করা কঠিন।


উপসংহার:-

বাংলাদেশ জন্ম নেওয়ার পরে থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত যতগুলো সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিটি সরকার ব্যবস্থা পূর্ববর্তী সরকারের লোকজনের অপরাধের জন্য বিভিন্ন প্রকার মামলা দায়ের করে এবং পরিচালনা করে থাকে ।সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবার সেই সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করা থাকে। এই মামলা দায়ের এবং প্রত্যাহারের পরিক্রমায় অর্থনৈতিক ক্ষতি,সামাজিক ক্ষতি ও নৈতিকতার বিশাল ক্ষতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।আমরা অবশ্যই এই ক্ষতি থেকে মুক্তি চাই এবং ন্যায়বিচার চাই।


মোহাম্মদ ইয়ার আলী

প্রোপাইটার , আলিবাবা থিম পার্ক ও আলী কোল্ড স্টোরেজ।