শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
সর্বশেষ বিশেষ সংবাদ জাতীয় সারাদেশ আন্তর্জাতিক খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফস্টাইল আইন-আদালত মতামত অন্যান্য
/ বিশেষ সংবাদ

দেশের তিন উপজেলায় থামছে না বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব


প্রকাশ :

শেরপুর জেলার সীমান্ত এলাকা জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে হাতি-মানুষের দ্ব›দ্ব চলমান রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের জেরে গত এক দশকে হাতির আক্রমণে শিশুসহ ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে, গর্তে পড়ে কিংবা মানুষের তৈরি বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে ২৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। গারোপাহাড়ি অঞ্চলে মানুষ ও হাতির এই দ্বন্দ্বের অবসান কীভাবে হবে-সে পথ খুঁজে পাচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। 

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় থেকে দলছুট হয়ে ২০-২৫টি হাতি গারো পাহাড়ে প্রবেশ করে। সেই থেকে বন্যহাতিগুলো শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবর্দী উপজেলাসহ হালুয়াঘাটে বসবাস করে আসছে। একসময় এই অঞ্চলে বিশাল এলাকা জুড়ে শাল ও গজারি বন ছিল। তখন বন্যপ্রাণিদের খাবারেরও অভাব ছিল না। কিন্তু এক সময় বন পরিষ্কারের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন শুরু হয়। শত শত একর জমিতে চাষাবাদও আরম্ভ হয়। গড়ে উঠে মানুষের বসতি। তখনই হাতিদের বিচরণ ক্ষেত্রে কমে যায়। দেখা দেয় খাদ্যাভাব। খাদ্যের অভাবে হাতির দল বন থেকে বেরিয়ে লোকালয়ে আসতে থাকে। শুরু হয় হাতি ও মানুষের সংঘাত। 

বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, গারোপাহাড়ে এখন কমপক্ষে ৬০-৭০টির অধিক হাতি রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে হাতি সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, বনে এখন খাদ্যের সংকট থাকায় ক্ষুধার্ত বন্যহাতি পাল দল বেঁধে লোকালয়ে এসে দিনে-রাত হানা দিচ্ছে। 

তাদের অভিযোগ-বাড়িঘর ভাঙচুর ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি আর প্রাণহানি হলে বনবিভাগ থানায় জিডি করার পরামর্শ দিয়েই দায় সারছে। ক্ষতিপূরণ আদায়েও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। বন্যহাতি দ্বারা নিহত পরিবারকে বনবিভাগ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা, আহতদের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকা, ফসলের ক্ষতি হলে ৫০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। তবে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এই ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে গারোপাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে মারা গেছেন ৩৫ জন। আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ। একই সময়ে ২৯টি বন্যহাতি মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় মামলাও হয়েছে একাধিক

“হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। যেসব জায়গায় হাতি চলাচল করে সেসব জায়গায় মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে।

ড. মনিরুল এইচ খান, অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।”

নালিতাবাড়ী উপজেলার পানিহাটা গ্রামের বিজার কুবি বলেছেন, আমরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। যুগযুগ ধরে আমরা পাহাড়েই বসবাস করে আসছি। কয়েক বছর ধরে হাতির আক্রমণ অত্যধিক হারে বেড়ে গেছে। আদিবাসি নেতা লুইস নেংমিনজার ভাষ্য মতে, হাতিগুলো ফসলের খেতে ও বাড়িঘরে হামলা করছে খাদ্যের জন্য। এখন বনে খাবার কমে যাওয়ায় হাতিগুলো ক্ষুধার তাড়নায় লোকালয়ে এসে ছোটাছুটি করে ঘরের খাবার খেয়ে যাচ্ছে। 

মধুটিলা ইকোপার্ক এলাকার রেঞ্জার রফিকুল ইসলাম বলেন, আন্তঃদেশীয় সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাটা তারের বেড়া না দেওয়া পর্যন্ত হাতির আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব না। ইকোপার্কের ভিতর ৭০ হেক্টর জমিতে দেশীয় প্রজাতি গাছের বাগান করা হয়েছে। ৬ অক্টোবর থেকে চার-পাঁচ দিন ইকোপার্কে হাতি অবস্থান করে গাছগাছলা খেয়ে সাবাড় করেছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ১৮ অক্টোবর হাতি কাটাবাড়ী এলাকায় অবস্থান করছে বলে তিনি জানান।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, এই এলাকায় হাতি- মানুষের দ্ব›দ্ব অনেক দিনের। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রায়ই আসে হাতির বিরুদ্ধে থানায় জিডি করতে। জিডির পর ক্ষতিপূরণ পায়। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের মতে, হাতি রক্ষায় প্রথমে হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থলগুলো সুরক্ষিত করতে হবে। যেসব জায়গায় হাতি চলাচল করে সেসব জায়গায় মানুষের বসতি কমিয়ে মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করতে হবে।